কলকাতা: কেষ্ট-কুকথা মামলায় জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে এসপিকে ভার্চুয়ালি হাজিরার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। কমিশনের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট।

বোলপুর থানার IC লিটন হালদারকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূল নেতা ও বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অনুব্রতর কদর্য আক্রমণ নিয়ে জল গড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে দু'বার অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট তলব করেছিল জাতীয় মহিলা কমিশন। কিন্তু কোনও রিপোর্টেই সন্তুষ্ট না হয়ে, সশরীরে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপকে। কিন্তু জাতীয় কমিশনের তলবে হাজিরা দেননি বীরভূমের SP। এর প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলার শুনানি ছিল শুক্রবার। এদিন আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে হাজিরা দিতেই হবে পুলিশ সুপারকে। কেষ্টর কুকথা-মামলায় ১৪ জুলাই বীরভূমের এসপিকে ভার্চুয়ালি হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট জানিয়েছে, 'যা নথি প্রয়োজন, তা কমিশনে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পাঠাবে পুলিশ। কোনও নথি দিতে না পারলে, জানাতে হবে তার কারণ। নথি যাচাইয়ের পরেও উপস্থিতি প্রয়োজন হলে, পাঠানো যাবে প্রতিনিধিকে। কোনও প্রতিনিধিকে পাঠাবেন বীরভূমের পুলিশ সুপার।'

এর আগে, রিভাইসড অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাওয়ার পাশাপাশি, চিঠিতেই জাতীয় মহিলা কমিশন একাধিক ধারা যুক্ত করার কথা বলেছিল। উল্লেখ করা হয়, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মহিলার শালীনতা লঙ্ঘন করার উদ্দেশে শব্দপ্রয়োগের জন্য ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৯ ধারা, শান্তি নষ্ট করতে প্ররোচনা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপমান করার জন্য ৩৫২ ধারা, এবং মহিলার শালীনতা লঙ্ঘনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপরাধমূলক বলপ্রয়োগের জন্য ৭৪ ধারায় মামলা রুজু করা হোক। এমনকী পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠিয়ে চিঠিতেই জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে বলা হয়, FIR অনুযায়ী যে ধারাগুলি দেওয়া হয়েছে তা অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। কোন কোন ধারা যুক্ত করতে হবে, তা কমিশন আগেই জানিয়েছে।

এই বিষয়ে এদিন হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে জাতীয় মহিলা কমিশন। হাইকোর্ট প্রশ্ন করে, 'তদন্তকারী সংস্থার কাজে কীভাবে হস্তক্ষেপ? কোন ধারা যুক্ত হবে, কীভাবে নির্দেশ দেন আপনারা?' বিচারপতির প্রশ্নের মুখে জাতীয় মহিলা কমিশন জানায়, 'লঘু ধারায় মামলা, তাই নির্দেশ নয়, পরামর্শ দিয়েছি।' পাল্টা বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানতে চান, "কীসের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দিচ্ছেন, আপনাদের কাছে কি তথ্যপ্রমাণ আছে?' আপনাদের কাছে যে তথ্যপ্রমাণ আছে সেটা কেস ডায়রির থেকে বেশি, এটা দেখান। দেশে প্রচুর কমিশন আছে, সবাই তদন্তে হস্তক্ষেপ করলে কীভাবে চলবে? তদন্ত করুন, কাউকে ডাকতে চাইলে ডাকুন, কিন্তু কেস ডায়রি দেখতে পারেন না।'' হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে জাতীয় মহিলা কমিশনের সওয়াল, "আমরা কেস ডায়রি দেখতে চাইনি, এখানে অভিযুক্ত অত্যন্ত প্রভাবশালী। আমরা কেন্দ্র-রাজ্যকে পরামর্শ দিতে পারি, সেই অধিকার আছে। শুধু পুলিশ আধিকারিকের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, অনুব্রত মণ্ডলের নয়।''