বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: হোলির আগের দিন মাঝরাতে সরগরম হয়ে ওঠে দিল্লি।  টানটান নাটক অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে। রাতেই অশোক বিহারে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিচারক রাকেশ সিংয়ের কাছে অনুব্রতকে ভার্চুয়ালি পেশ করা হয়। ১০ মার্চ পর্যন্ত অনুব্রতকে ৩ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। দিল্লিতে পৌঁছে ইডি-র সদর দফতরেই কেটেছে প্রথম রাত। 


সূত্রের খবর, মন খারাপ রয়েছে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রতর। কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে বসে এদিন ইডি-র জেরার মুখোমুখি হবেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। বাড়ি ছেড়ে এত দূরে, চাইলেই কাছের লোকেদের দেখার বা ডাকার উপায় নেই। প্রথম রাতটা ঘুমহীন কেটেছে অনুব্রতর, এমনটাই খবর। তিনি নাকি কেবল পায়চারি করেছেন। সকালে চা-বিস্কুট খেয়েছেন কেষ্ট। কিন্তু কোনও কিছুতেই মন নেই 'বীরভূমের বাঘে'র। এবার ৩ দিনের হেফাজতে ইডি-র জেরার মুখে কেষ্ট মুখ খোলেন কি না, সেটাই দেখার। 


বুধবার বেলা ১২টার পর থেকে দিল্লির সদর দফতরে অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা শুরু করবেন ইডি-র অফিসাররা। দুপুরের পর অনুব্রতর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে। সূত্রের খবর, অনুব্রতর কাছ থেকে মূলত টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইবে ইডি। কয়েকবছরের মধ্যে কীভাবে রকেটের গতিতে অনুব্রতর সম্পত্তি বেড়েছে, টাকা কোথা থেকে এসেছে, রাজনৈতিক নেতা অনুব্রত মণ্ডলের রোজগারই বা কী, এসবই জানতে চাইবেন ইডি-র তদন্তকারীরা।


সূত্রের খবর, অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যার রাইস মিলের অ্যাকাউন্টে কীভাবে কোটি কোটি টাকা এল, তা জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি, অনুব্রতর পরিচারক বা কর্মী, যাঁরা কয়েক হাজার টাকা বেতন পান, তাঁদের অ্যাকাউন্টে কীভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা এল, সেটাও ইডি-র প্রশ্ন। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের বয়ানকে সামনে রেখেই আজ বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে জেরা করবেন ইডি-র তদন্তকারীরা। 


আইনি টানাপোড়েন চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। অবশেষে দোলের দিনেই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হেফাজতে দিল্লি যেতে হল গরুপাচার মামলায় ধৃত বীরভূমের (Birbhum News) জেলা তৃণমূল (TMC) সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal)। আসানসোল থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি পর্যন্ত সেই যাত্রাপথে সঙ্গী হল বিতর্কও। কটাক্ষও উড়ে এল। 


গত ১৯ ডিসেম্বর অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ায় জন্য ইডি-র আবেদনে, ছাড়পত্র দিয়েছিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। সেই দিন দুপুরেই, অনুব্রতর বিরুদ্ধে একবছর আগে, তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূল কর্মী শিবঠাকুর মণ্ডল।


সঙ্গে সঙ্গে মামলা দায়ের করে পরের দিনই সেই মামলায় অনুব্রতকে সাতদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। বিরোধীরা অভিযোগ তোলে অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা রুখতেই পরিকল্পনা করে মিথ্যে মামলা দায়ের করানো হয়েছিল শিবঠাকুর মণ্ডলকে দিয়ে। এর পরই গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে তৃণমূল নেতা শিবঠাকুর মণ্ডলের করা খুনের চেষ্টার অভিযোগের প্রসঙ্গ।