সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি। SSC-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান থেকে প্রাক্তন উপদেষ্টা ও সচিব। একদা রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন যাঁরা, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে ইডি, সিবিআই, যা নিয়ে শিক্ষামহলেও প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে (SSC Recruitment Scam)।


পার্থকে দিয়ে শুরু, পর পর গ্রেফতার শান্তিপ্রসাদ, অশোক, কল্যাণময়, সুবীরেশ এবং মানিক


শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে, অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী রাস্তায় বসে চোখের জল ফেলছেন। আর কিছুদিন আগে অবধি রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন যাঁরা, তাঁরা কেউ সিবিআই (CBI)-ইডি-র (ED) লক আপে, কেউ আবার জেলবন্দি (SSC Scam)।  


শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় গত ২৩ জুলাই প্রথম গ্রেফতার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। ১০ অগাস্ট SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অশোক সাহাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ১৫ সেপ্টেম্বর সিবিআই গ্রেফতার করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। 


আরও পড়ুন: SSC Scam: ‘দাদা, যা তা ভাবে টাকা তুলছেন মানিক’, মেসেজ পেয়েছিলেন পার্থও! চার্জশিটে দাবি ইডি-র


এর চার দিন পর ১৯ সেপ্টেম্বরই আবার সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হন SSC-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, যিনি আবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেও ছিলেন।  আর এবার ইডি-র হাতে গ্রেফতার হলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।


রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ছিল যাঁদের হাতে, পর পর তাঁদের এ ভাবে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শিক্ষামহলে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার এবিপি আনন্দকে বলেন, "এটা খুব লজ্জার, তখন অনিলায়নের কথা বলা হত...পৃথিবীর কোথাও এরকম নেই।"


গ্রেফতারির তালিকা কি আরও দীর্ঘ হবে!


শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ভবিষ্যতে গ্রেফতারের এই তালিকা কি আরও দীর্ঘ হবে? শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আরও কোনও হেভিওয়েট কি গ্রেফতার হবেন?  তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। 


এর মধ্যে আবার মানিক সম্পর্কে পার্থর কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, পার্থকে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ মেসেজ করেছিলেন। তাতে মানিকের বিরুদ্ধে টাকা তোলা, হুমকি দেওয়া, এমনকি নদিয়ার TET-এর মাস্টার শিট চেয়ে চাপ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও করা হয়। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, পার্থকে পাঠানো সেই মেসেজে লেখা ছিল, 'দাদা, মানিক ভট্টাচার্য যা তা ভাবে টাকা নিচ্ছেন। করোনার সময় কলেজ বন্ধ থাকাকালীন, প্রত্যেকটা বেসরকারি বিএড কলেজ থেকে ছাত্র পিছু ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন। ছাত্ররা টাকা দিতে না পারায় কলেজই টাকা দিয়েছে। আবার তিনি ছাত্র পিছু ৫০০ টাকা করে চেয়েছেন। তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে হেনস্থা করেন এবং টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। নদিয়ায় প্রাথমিকে টেটের ইন্টারভিউ হয়ে গেছে, কিন্তু মানিক ভট্টাচার্য চেয়ারম্যানকে বলছেন, ইন্টারভিউয়ের নম্বর না বসিয়ে, সই করা মাস্টার শিট দিতে'। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে পদক্ষেপ করার পরিবর্তে পার্থ ওই মেসেজ মানিককেই ফরোয়ার্ড করে বলে দাবি ইডি-র।