আবীর দত্ত, কলকাতা: স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Scam) গ্রেফতার হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)কাছেও, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate) সূত্রে এমনই তথ্য় উঠে আসছে। হোয়াটসঅ্যাপে পার্থকে তাঁর কোনও ঘনিষ্ঠ সেই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্তে এখন সেই মেসেজকেই হাতিয়ার করছেন তদন্তকারীরা। পার্থর বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা পড়েছে, তাতেও ওই মেসেজের উল্লেখ রয়েছে।
মানিকের বিরুদ্ধে পার্থর কাছে আসা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজই ইডি-র হাতিয়ার!
এক দিকে স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্য দিকে, গরুপাচার মামলা। দু'ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের। গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে সরাসরি তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে সাক্ষী করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। অনুব্রতর বিরুদ্ধে শতাব্দীর বয়ানকে হাতিয়ার করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তেমনই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ভিতরের কারও বক্তব্যই শাসকদলের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ মানিককে নিয়ে পার্থর কাছে পৌঁছনো মেসেজই এখন ইডি-র হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
ইডি-র চার্জশিটে বলা হয়েছে, পার্থকে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ মেসেজ করেছিলেন। তাতে মানিকের বিরুদ্ধে টাকা তোলা, হুমকি দেওয়া, এমনকি নদিয়ার TET-এর মাস্টার শিট চেয়ে চাপ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও করা হয়। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, পার্থকে পাঠানো সেই মেসেজে লেখা ছিল, 'দাদা, মানিক ভট্টাচার্য যা তা ভাবে টাকা নিচ্ছেন। করোনার সময় কলেজ বন্ধ থাকাকালীন, প্রত্যেকটা বেসরকারি বিএড কলেজ থেকে ছাত্র পিছু ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন। ছাত্ররা টাকা দিতে না পারায় কলেজই টাকা দিয়েছে। আবার তিনি ছাত্র পিছু ৫০০ টাকা করে চেয়েছেন। তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে হেনস্থা করেন এবং টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। নদিয়ায় প্রাথমিকে টেটের ইন্টারভিউ হয়ে গেছে, কিন্তু মানিক ভট্টাচার্য চেয়ারম্যানকে বলছেন, ইন্টারভিউয়ের নম্বর না বসিয়ে, সই করা মাস্টার শিট দিতে'।
আরও পড়ুন: TMC: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে তমোঘ্ন, 'মমতার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদীপ’, বিস্ফোরক তাপস
ইডি-র চার্জশিট অনুযায়ী, মেসেজে আরও লেখা ছিল, 'আবার ও টাকা নিয়ে করবে, আবার কেস হবে, আবার পার্টি খাস্তা হবে। প্লিজ এটা দেখুন। ভালবাসা'। ইডি-র দাবি, মানিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পেয়ে পদক্ষেপ করার পরিবর্তে মানিককেই মেসেজটি ফরোয়ার্ড করে দেন পার্থ।
চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, ২০২০-র ২৮শে ডিসেম্বর পার্থকে মেসেজে মানিক ভট্টাচার্য লেখেন, '১০ মিনিট দিস, জরুরি বিষয়, বাড়ি যাব'। উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, 'ওকে'।
এর পর, ২০২১ সালের ১০ই জানুয়ারি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠানো মেসেজে মানিক ভট্টাচার্য লেখেন, 'সারা রাজ্যে সুষ্ঠুভাবে ইন্টারভিউ শুরু হয়েছে'। উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, 'TKS'। ইডি-র দাবি, জেরায় এই সব বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
মেসেজ পেয়েও মানিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি পার্থ!
উল্লেখ্য, পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই ইডি-র নজরে ছিলেন মানিক। দু’জনের কথোপকথন অন্যতম তথ্য সূত্র বলে মনে করছে ইডি। চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট মানিককে বিভ্রান্তিকর বয়ান এবং ২৭৩ জন প্রার্থীর বেআইনিভাবে নিয়োগের জন্য দায়ী করেছিল। তার জন্য মানিক এবং তাঁর পরিবারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য হলফনামা আকারে দিতে বলেছিল আদালত।