কলকাতা: নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে এখনও উত্তাল গোটা রাজ্য। নিত্যদিন নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। তার মধ্যেই রবিবার নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল প্রাথমিক টেট পরীক্ষা। ব্যাগ রাখা, সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা নিয়ে ছুটকো ঝামেলা ছাড়া, গুরুতর কিছু ঘটেনি। সেই আবহে অতীত ভুলে ভবিষ্যতের পথে এগনোর বার্তা দিলেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
২০১৭ থেকে '২২, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রাজ্যে প্রাথমিক টেট পরীক্ষা হল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এ দিন পরীক্ষাগ্রহণ হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটকে মেটাল ডিটেক্টর থেকে কন্ট্রোল রুমে বসে নজরদারি, কোনও কিছুই বাদ দেয়নি পর্ষদ। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরাদেরও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি সে ভাবে। সেই আবহেই মুখ খুললেন ব্রাত্য।
এ বারে প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। দুর্নীতির অভিযোগে দলের লোকজনের নাম জড়ানোতেই কি এমন তৎপরতা! এ দিন এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বলেন, "আমি বলব,যা হয়েছে, তাকে ছাপিয়ে, অতীতকে মনে রেখে, সংস্কার ঘটিয়ে, যে ভাবে পরীক্ষা নিল পর্ষদ, তার জন্য অভিজ্ঞতা এবং কৃতজ্ঞতা জানাব। মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা এবং নির্দেশ না থাকলে এ ভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেত না। এ ভাবে পরীক্ষা দিতে পারতেন না সাত লক্ষ পরীক্ষার্থী।"
নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বার বার কার্যত অপদস্থই হতে হয়েছে তৃণমূলকে। প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে খোদ মমতাকে। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, মানুষের আস্থা অর্জনেই কি নিরাপত্তায় এত জোর! প্রশ্নের উত্তরে ব্রাত্য বলেন, "আমি তো মনে করি, আস্থা রয়েছে। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখেছেন। কোথাও ভুল, অন্যায় যদি হয়ে থাকে, আমরা তার প্রতিকারের চেষ্টা করছি। কেউ কেউ হয়ত অতীত দেখবেন। আমি বলব, ভবিষ্যৎ দেখতে। অত্যন্ত দায়িত্ব-সহকারে পরীক্ষা নিয়েছে পর্ষদ। আমি বলব, সামনের দিকে তাকান।"
এর আগে, শনিবার টেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে, মোটা টাকার বিনিময়ে হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন শুভেন্দুর সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন ব্রাত্য। হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্র ছড়ানো হচ্ছিল বলে জানান তিনি। সেই নিয়ে পর্ষদের তরফে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগও দায়ের হয়েছে বলে জানান। এই ভুয়ো প্রশ্নপত্র ছড়ানোর নেপথ্যে বিরোধী শিবিরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠ ভাবে না হতে পারে, তার জন্য় ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে বলে জল্পনা উস্কে দেন তিনি।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "প্রথম কথা, এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হোক, আমরা সকলেই চাই। এই প্রথম অন্তত তা করে দেখাক পর্ষদ। তাহলে ধন্যবাদ জানাব ওদের। হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ ঠিক হয় এতে। প্রশ্নপত্র ভুয়ো হলে, পরীক্ষায় ধরা পড়বেই। বার বার এমন হয়। পরীক্ষা এলেই ফাঁস হয়ে যায় প্রশ্নপত্র। বাংলার স্বার্থেই এই প্রথা ভাঙা দরকার। অনেক কিছু চলছে, সিবিআই অনেক কিছু দেখাচ্ছে, তাই সন্দেহ। আর হবে না, তা কেউ বলতে পারে না।"