কলকাতা: সজ্ঞানে দিল্লি গিয়েছেন বলছেন তিনি। ছেলে যদিও মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা বলছেন। বিগত ৪৮ ঘণ্টা নিয়ে তাই মুকুল রায়কে (Mukul Roy) নিয়ে রাজনৈতিক ওঠাপড়া চলছে। এবিপি আনন্দকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ সেখানে বিজেপি-তে ফিরতে চান বলে দাবি করলেও, প্রতিপক্ষ বাছার ক্ষেত্রে CPM-এর কথা উঠে আসছে তাঁর মুখে, বাংলায় যাদের সঙ্গেই কিনা সরাসরি সংঘাতে পদ্মশিবির। তাই মুকুলের সুস্থতা নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠে আসছে (Mukul Roy Health)।


সরাসরি তাঁকে পরীক্ষা করে না দেখা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা অসম্ভব


মুকুল আসলে সুস্থ নাকি অসুস্থ, কৌশলী অবস্থান নিচ্ছেন তিনি, নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, একটি বিশেষ সময়ে তিনি আটকে গিয়েছেন কিনা, সরাসরি তাঁকে পরীক্ষা করে না দেখা পর্যন্ত বলা অসম্ভব। কিন্তু মুকুলের বক্তব্য শুনে বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট মনোবিদ সব্যসাচী মিত্র এবিপি আনন্দে নিজের মতামত জানান। 


মুকুলকে নিয়ে মূলত তিনটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন সব্যসাচীবাবু। গত কাল থেকে এবিপি আনন্দকে দেওয়া মুকুলের পাঁচটি সাক্ষাৎকার শুনে তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে, এর মধ্য়ে প্রথমটি হল ডিমেনশিয়া, দ্বিতীয়টি সিউডো ডিমেনশিয়া এবং তৃতীয়টি হল সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভাবে কথাগুলি বলছেন কিনা মুকুল। মুকুলের বক্তব্য শুনে আপাত ভাবে তৃতীয় সম্ভাবনাটি রয়েছে বলে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হচ্ছে না সব্যসাচীবাবুর। বাকি দু'টি ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।


সব্যসাচীবাবু জানিয়েছেন, ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত, তা হল- মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট ভলিউম থাকে। বয়সের সঙ্গে অথবা ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবিটিস থাকলে, মস্তিষ্ক শুকিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কমে যায় কার্যক্ষমতাও। সাধারণ মানুষ এই লক্ষণ দেখলে অ্যালঝাইমার্স বলেন। মুকুলের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষণীয়, তা হল, পর পর তিনিট বাক্য বললে, প্রথম এবং তৃতীয় বাক্যটি ঠিক থাকলেও, মাঝেরটি ভুল হয়ে যাচ্ছে। একে বলে কনফ্যাবুলেশন, যা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ।


আরও পড়ুন: Subhranshu Roy: তিন দিন ধরে ইনস্যুলিন-ওষুধ বন্ধ, মুকুল নিজের মধ্যে নেই আর! অবশেষে ছেলের সঙ্গে কথা


সন্ধের দিকে সাধারণত এই সমস্য়া বাড়ে বলে জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবু। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসার ভাষায় একে বলা হয় সানডাউন সিনড্রোম। আসলে মস্তিষ্কের আকার যদি বলের মতো হয়, সে ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের একেবারে মধ্যিখানে থাকে লং টার্ম মেমরি বা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি। ডিমেনশিয়া বাইরে থেকে সেই বলের মধ্যে ঢোকে যদি, সে ক্ষেত্রে বাইরের দিকে থাকা শর্ট টার্ম মেমরি বা স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিতে প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ আজ দুপুরে কী খেয়েছেন, তা বেমালুম ভুলে যান রোগী। কিন্তু ছোটবেলায় কোন মাঠে খেলতে যেতেন, তা মনে থাকে। মুকুল যে ২০১১ সালের কথা বলছেন, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি মিলে যাচ্ছে। 


এ ক্ষেত্রে আরও একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন সব্যসাচীবাবু। তিনি জানিয়েছেন, এমনিতে কথার চয়নের ক্ষেত্রে আটকে যাই না আমরা। শব্দগুলি জানা। তাই মুখে এসে যায়। কিন্তু মুকুলের ক্ষেত্রে শব্দ এবং কথার চয়নে দেরি হচ্ছে, যাকে বলা হয়, ওয়র্ড ফাইন্ডিং ডিফিকাল্টি। এক শব্দের জায়গায় অন্য শব্দ বসিয়ে ফেলেন অনেকে, যাকে বলা হয় ওয়র্ড ফাইন্ডিং এরর। গত ৪৮ ঘণ্টায় বার বার 'সার্বিক' শব্দটি ব্যবহার করেছেন মুকুল। একে রিপিটেবিলিটি বলা হয়, যা-ও কিনা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ বলে জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবু। ওই শব্দ বলেছেন, সেটাই স্মরণে থাকছে না, তাই বার বার একই শব্দের ব্য়বহারের প্রবণতা দেখা যায়। 


গোটাটাই সম্ভাবনা, মুকুলের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও দাবি করা হচ্ছে না


তবে গোটাটাই বাইরে থেকে, শুধুমাত্র সাক্ষাৎকার শুনে যে যে সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে, তা-ই তুলে ধরেছেন সব্যসাচীবাবু। তাই মুকুলের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও দাবি করা বা কিছু প্রমাণ করা অথবা কিছু বলা, কোনওটাই উদ্দেশ্য নয় এবিপি আনন্দ এবং সব্যসাচীবাবুর।