কলকাতা: হাইকোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত খবর সম্প্রচার বন্ধের জন্য় সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই জোড়া আবেদনই খারিজ হয়ে গেল শীর্ষ আদালতে। আদালত জানিয়ে দিল, এ ব্যাপারে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না তারা। তবে কিছু বলার থাকলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারেন অভিষেক। আর সেই নিয়ে নতুন করে তরজা শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। বিচারব্যবস্থার উপর চাপসৃষ্টি করে কিছু হবে না, আগামী দিনে জেলে যেতে হবে বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চ বদল অর্থাৎ বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে মামলা সরানো এবং কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত খবরের সম্প্রচার বন্ধের আবেদন নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন অভিষেক। জানান, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিরোধীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যা পোস্ট করছেন, সংবাদমাধ্যমে যা বেরোচ্ছে, তাতে ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হচ্ছে তাঁর। শুক্রবার শুনানি চলাকালীন, প্রথম আবেদনটি নিয়ে এখনই কোনও পদক্ষেপ চাইছেন না বলে জানান অভিষেকের আইনজীবী। তাতেই শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের মধ্যে ঢুকবে না তারা। কিছু বলার থাকলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারেন অভিষেক।
শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরই কটাক্ষের বন্যা বইছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। অভিষেককে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, "কোথায় গেল বড় বড় কথা যে, 'দোষী প্রমাণিত হলে ফাঁসির মঞ্চে চলে যাব'? এখন যে অভিযুক্ত, যে চোর, সে-ই বিচারক পরিবর্তন করতে চাপ দিচ্ছে। এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে পাল্টানোর চেষ্টা করেছিলেন। বার বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ভয় পাচ্ছেন যে, যদি সঠিক ভাবে বিচার হয়, বিচারক যদি মেরুদণ্ড বিক্রি করে না দেন, তাহলে আগামী দিনে জেলে যেতে হবে।"
আবার তৃণমূল এবং বিজেপি, কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, "কোনও মামলা হলেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রক্ষাকবচ পাওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে তদন্ত না হয়। কেউ কিছু বললেও, পাল্টা রক্ষাকবচ পেতে চান। আদালতে যখন রক্ষাকবচ পান না, দিল্লিওয়ালাদের, মোদি-শাহের রক্ষাকবচ নিয়ে চলতে পছন্দ করেন। সুপ্রিম কোর্ট আজ খারিজ করলেও, দিল্লি সরকারের সাহায্যে, সৌজন্যে এবং সহযোগিতায়, তৃণমূলের নেতা হিসেবে যা করার, করে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে বিজেপি-র প্রশ্রয় আছে।"
যদিও সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্যের পর এদিন সাংবাদিক বৈঠেক করেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, কিছু বিচারপতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এমন কিছু মন্তব্য করছেন, যা বিরোধীদের প্রচারের কাজে লাগছে। বিচ্ছিন্ন মন্তব্য করা যাবে না বলে সাফ জানিয়েছে। পুরোটা না বলে শীর্ষ আদালতের একটি মন্তব্যকেই শুধু বিকৃত করে দেখানো হচ্ছে। কুণালের কথায়, "আদালতের মন্তব্য বিকৃত করে দেখানো হচ্ছে, তার অপব্যবহার করছে বিরোধীরা। আদালত জানিয়েছে, বিচারপতিরা মামলা নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে পারবেন না, নজরদারির নামে মামলায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না, ইডি-সিবিআই নিয়ম মেনে তদন্ত চালাবে, মামলা সংক্রান্ত ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা যাবে না। আদালত নির্দিষ্ট করেই জানিয়েছে এগুলি, যার খুব প্রয়োজন ছিল। আজ গণ্ডি বেঁধে দিয়েছে আদালত। অর্থাৎ আবেদনে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছিল, সেগুলি বৈধতা পেয়েছে আদালতে।"