শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: বাবার মৃত্যুতে মাত্র সাত বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ। তার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে বিমানে চেপে লড়াই, ময়দানে ক্রিকেটও খেলেছেন চুটিয়ে। রাজ পরিবারের ছেলে, রাজকীয় উপস্থিতি ছিল বরাবরই। কিন্তু নিজের সেই রাজপাটই সরকাররে হাতে অর্পণ করে দেন। তিনি কোচবিহারের শেষ রাজা, মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ (Jagaddipendra Narayan)। শুক্রবার তাঁর ১০৮তম জন্মবার্ষিকী।


১৯১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর কোচবিহারের তৎকালীন মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ এবং মহারানি ইন্দিরা দেবীর প্রথম সন্তান জগদ্দীপেন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। বয়স যখন সাত বছর, বাবা মারা যান। তার পর ওই বয়সেই সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। কিন্তু নাবালক হওয়ায় রাজমাতা ইন্দিরা দেবীই অভিভাবক হিসেবে, শাসনব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। (Last Maharaja of Cooch Behar)


শিক্ষার জন্য বিলেতযাত্রা করেন জগদ্দীপেন্দ্র। প্রথমে ইংল্যান্ডের ইস্ট বোর্টের সেন্ট সেঞ্চুরিয়ান স্কুল, তার পর হ্যারো এবং পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। দেশে ফিরে সেনার অ্যাকাডেমিতে অধ্যয়ন শেষ করেন এবং যোগ দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। ২২ বছর বয়স পূর্ণ করলে, ১৯৩৬ সালে শাসনক্ষমতা পাকাপাকি ভাবে হাতে পান।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে যোগদান করেন জগদ্দীপেন্দ্র। নিজে প্রশিক্ষিত পাইলট ছিলেন। নিজের বিমানও ছিল তাঁর। সেই নিয়েই যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হয়। তার পরও কোচবিহারের স্বাধীন রাজা ছিলেন জগদ্দীপেন্দ্র। ১৯৪৯ সালের ১২ অগাস্ট, সিংহাসনে আসীন থাকাকালীনই কোচবিহারকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করেন জগদ্দীপেন্দ্র। 


আরও পড়ুন: CV Ananada Bose: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই রাজ্যপালকে কালো পতাকা, ব্যাক স্লোগানে বিক্ষোভ সদস্যদের


রাজপাট আর নেই আজ। রাজাও বেঁচে নেই। কিন্তু কোচবিহারবাসীর মনে আজও বিশেষ জায়গা দখল করে রয়েছেন জগদ্দীপেন্দ্র। কোচবিহারবাসী আজও তাঁর অবদান স্মরণ করেন পদে পদে। শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জগদ্দীপেন্দ্র। তাঁর সময়ে বিভিন্ন স্কুল, হাসপাতাল তৈরি হয়েছে কোচবিহারে, যা এখনও সাধারণ মানুষের  আশা-ভরসা।


জগদ্দীপেন্দ্র ক্রীড়াপ্রেমীও ছিলেন। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত বাংলা রঞ্জি দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। তাঁর উদ্যোগেই কোতবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থা গঠিত হয়ষ কোচবিহারে বিমানবন্দরও তিনি তৈরি করেন, যা আগে ছিল পোলো খেলার মাঠ। পোলো খেলাতেও হাতযশ বেশ ছিল তাঁর। তাঁর সময় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা তৈরি হয়, গোড়ায় যার নাম ছিল কোচবিহার স্টেট মোটর্স। 


১৯৭০ সালে কলকাতায় পোলো খেলতে গিয়েই আঘাত পান জগদ্দীপেন্দ্র। সে বছরই ১১ এপ্রিল মারা যান তিনি। দু'বার বিয়ে হলেও, প্রথম পক্ষের সন্তান জন্মের কিছু দিন পরই মারা যায়। মৃত্য়ুর সময় নিঃসন্তান ছিলেন জগদ্দীপেন্দ্র। জয়পুরের রাজমাতা মহারানি গায়ত্রী দেবী, যাঁর সৌন্দর্যের খ্যাতি দেশে-বিদেশে, তিনি জগদ্দীপেন্দ্রর বোন ছিলেন। গায়ত্রীদেবীর আত্মজীবনীতে বার বার জগদ্দীপেন্দ্রর কথা উঠে এসেছে।