বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: মনোনয়ন থেকে কৌশল বৈঠক, নিজেদের বিজেপি (BJP) বিরোধী শিবিরের অংশ বলে দাবি করলেও, বিরোধীদের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মার্গারেট আলভাকে (Margaret Alva) নিয়ে বিরোধীদের কোনও বৈঠকেই দেখা যায়নি তৃণমূলকে (TMC)। বরং বিজেপি-র প্রার্থী জগদীপ ধনকড়ে (Jagdeep Dhankhar) সঙ্গে তাদের নয়া সমীকরণ ঘিরে উত্তাল রাজনীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অনুরাগী হিসেবে ধনকড়কে ব্যাখ্যা করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এমনকি গত তিন বছর ধরে লাগাতার সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হলেও, ধনকড় আদি বিজেপি নন বলেও মন্তব্য করতে শোনা যায় তাঁকে। সেই পরিস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (Vice President Election) তৃণমূল এবং দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদৌ বিরোধীদের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে সমর্থন জানাবেন কিনা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর এই আবহে মমতা-মার্গারেটের রাজনৈতিক সমীকরণও আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। নিজের বই 'কারেজ অ্যান্ড কমিটমেন্ট: অ্যান অটোবায়োগ্রাফি'-তে মমতার উল্লেখ করেছিলেন মার্গারেট। বিরোধীদের প্রার্থীকে নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান ঘিরে যখন প্রশ্ন উঠছে, সেই সময় মার্গারেটের সেই আত্মজীবনীই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মার্গারেট-মমতার রাজনৈতিক সমীকরণ চর্চায়
আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী ধনকড়ের বিরুদ্ধে ১৭টি বিরোধী দল প্রার্থী করেছে মার্গারেটকে। তৃণমূল তাঁকে দল সমর্থন করবে কিনা, তা জানা যাবে ২১ জুলাই। কালীঘাটে দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা। এই প্রেক্ষাপটেই মমতাকে নিয়ে মার্গারেটের লেখা উঠে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে মার্গারেট আলভার আত্মজীবনী। যেখানে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা লিখেছিলেন। ওই বইয়ে তিনি লেখেন, '১৯৯৭ সালে, কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনের সময় নিজের সমর্থকদের নিয়ে বিরাট সমাবেশের পরিকল্পনা করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে সেই সমাবেশে বক্তৃতা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। মনে করা হচ্ছিল, সেই সমাবেশ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস তৈরির ঘোষণা করবেন। সনিয়া তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর পরামর্শে আমি কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অনুরোধ করি, তাড়াহুড়ো না করতে। আমি জানাই, তাঁর এই শক্তি প্রদর্শনে সনিয়া গাঁধীর আসা সম্ভব নয়। তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানালে, আমি তা প্রত্যাখ্যান করে কেশরীকে ডাকার পরামর্শ দিই। তাতে তাঁর ক্ষিপ্ত উত্তর ছিল, কখনও না।'
মমতার সঙ্গে মার্গারেটের সম্পর্ক অবশ্য বহু পুরনো। নরসিংহ রাওয়ের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন দু'জনেই। ছ'বছর আগে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সময় নিজের আত্মজীবনীতে মমতার কথা লিখেছিলেন মার্গারেট। তাতে ২০০৬ সালের কথাও উঠে এসেছে। সেই সময় বাংলার বিরোধী নেত্রী মমতা। আর বাংলায় কংগ্রেসের দায়িত্বে ছিলেন মার্গারেট। আত্মজীবনীতে সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে মার্গারেট লেখেন, 'রফাসূত্র খুঁজতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছিলাম। তখন তাঁর দল এনডিএ-র শরিক। তাই তিনি আমাদের হাত ধরতে রাজি হননি। শেষমেশ তিনি জারি করবেন, এমন একটি বিবৃতির খসড়া আমরা তৈরি করি। সেখানে বলা হয়েছিল, তৃণমূল জাতীয় স্তরে এনডিএ-র শরিক, রাজ্যস্তরে নয়। এর ফলে আমাদের মধ্যে আসন সমঝোতার রাস্তা প্রশস্ত হয়। আর আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী দিইনি।' সেই সময়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মার্গারেটের কথায়, 'চূড়ান্ত সিলমোহরের জন্য সেই বিবৃতির খসড়া কংগ্রেস সভাপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হলে, তিনি দোনামনা করছিলেন। আর প্রণবদা চটে লাল হয়ে গেছিলেন। তিনি কিছু শুনতেই চাননি।'
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের অবস্থান ঘিরে প্রশ্ন
দেড় দশক পর সেই মার্গারেট আলভা উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী। এবার তৃণমূল NDA’র প্রার্থী ধনকড়ের দিকে যাবে? না তাঁর দিকে? সেটাই দেখার। তবে নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী সরাসরি মমতাকে একহাত নেন। তাঁর বক্তব্য, "যদি আপত্তি থাকে, মিটিংয়ে তা বলতে পারতেন। আপত্তি জানাতে পারতেন। মিটিংয়ে আসবেন না, বাইরে বলবেন, এটা তো হতে পারে না। উনি আসলে ধান্দাবাজ।" যদিও তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের দাবি, মার্গারেট একা একা মনোনয়ন জমা দেননি। ১০-১২জন ছিলেন তাঁর সঙ্গে। তাই আলাদা কর ম্যাটাডোর ভরে লোক নিয়ে গিয়ে বালখিল্যতা প্রমাণের প্রয়োজন বোধ করেননি তাঁরা। কিন্তু শেষমেশ তৃণমূল কোন দিকে যায়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।