প্রকাশ সিনহা, দীপক ঘোষ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: সটান নবান্নে (Nabanna) হাজির হয়ে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা বাড়িয়েছিলেন নিজেরাই। একবার ফের শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Baishakhi Banerjee) দলে ফেরার জল্পনা জোর পাচ্ছে। এই মুহূর্তে তৃণমূলের শহিদ স্মরণ দিবস, ২১ জুলাই ঘিরে রাজ্য জুড়ে প্রস্তুতি চরমে। শোনা যাচ্ছে, সেই ২১-এর মঞ্চেই (21 July) তৃণমূলে (TMC) প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে শোভন-বৈশাখীর। সূত্রের খবর, দুজনের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা হয়েছে। এ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল যদিও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে নারাজ।


২১-এর মঞ্চে শোভন-বৈশাখীর প্রত্যাবর্তন ঘিরে জল্পনা


দীর্ঘ 'অভিমান' পর্ব কাটিয়ে গত ২২ জুন দুপুরে আচমকাই নবান্নে হাজির হন শোভন-বৈশাখী। সোজা নবান্নের ১৪ তলায় উঠে যান দু'জনে। দেখা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক হয় তাঁদের মধ্যে। সেখান থেকে বেরিয়ে তৃণমূলে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন শোভন-বৈশাখী। জাবিয়ে দেন, অভিমান জমে ছিল দু'তরফেই। সেই সব মিটে গিয়েছে। মমতা যেদিন, যা নির্দেশ দেবেন, তা পালন করবেন তাঁরা। আরও এক কদম এগিয়ে শোভন বলেন, "মমতাদির কথা, মমতাদির ইচ্ছা বাস্তবায়িত করাটাই আমার কর্তব্য বলে আমি মনে করেছি এবং আমার রাজনীতিক জীবন, অন্য সবটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রিক।"


এ বার বৃহস্পতিবার ২১-এর মঞ্চে শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে নানা খবর সামনে আসছে। সূত্রের দাবি, গত কয়েক দিনে দফায় দফায় শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে কথা হয়েছে  তৃণমূলনেত্রীর। সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে খালি হওয়া মানিকতলা বিধানসভা আসন থেকে শোভনকে প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা হয়। দলে থাকাকালীন, যে সম্মান পেতেন, সেই সম্মান নিয়েই আগামী দিনে কাজ করচে চান বলে পাল্টা দাবি রাখেন শোভনও। শুধু তাই নয়, শোভনের সঙ্গে বৈশাখীও তৃণমূলে ফিরলে দলে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের (Ratna Chatterjee) ভূমিকা কী হবে, সেই নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে বলে খবর।


আরও পড়ুন: Kali Puja: মহুয়ার কালী-মন্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপির কালী পুজোর আয়োজন, মোদির খোঁজের পরই শুরু তৎপরতা


প্রত্যাবর্তনের খবর নিশ্চিত করতে এবিপি আনন্দের তরফে ফোন করা হলে বৈশাখী বলেন, " কলকাতার বাইরে আছি, ফিরে এসে কথা বলছি।" শোভনও তাঁর সঙ্গে কলকাতার বাইরেই রয়েছেন বলে জানান বৈশাখী। 


ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন নিয়েই এর আগে মমতার বিরাগভাজন হন শোভন। তার পর একে একে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা, তৃণমূলের সংসর্গ ত্যাগ এবং সর্বোপরি বিজেপি-তে যোগদান। তবে বিজেপি-তে যোগদানের পরও ২০১৯ সালে ভাইফোঁটার দিন মমতার বাড়িতে গিয়ে ভাইফোঁটা নিয়েছিলেন শোভন। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখীও। এ ছাড়াও, রাজ্য সরকারের আয়োজনে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্‍সবেও তাঁদের দেখা গেছিল সামনের সারিতে। 


শোভন-বৈশাখীর প্রত্যাবর্তনে রত্নার ভূমিকা নিয়ে জল্পনা


তবে বিজেপি-তে রাজনৈতিক কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস খেলার স্বপ্ন দেখলেও, অচিরেই সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় শোভনের। বিধানসভা ভোটের প্রার্থী পদ নিয়ে অসন্তোষের জেরে বিজেপি ছাড়েন তিনি। তার পর থেকে, আর সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে কার্যত যোগাযোগ নেই শোভনের। বরং যতবারই ক্যামেরার সামনে এসেছেন, ব্যক্তিগত রসায়ন, সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে কথা বলতে। তার মধ্যেই জুন মাসে নবান্ন গমন শোভন-বৈশাখীর। চেনা পরিসর থেকেই নতুন করে জমি খোঁজার চেষ্টা। তার জন্য় যদিও বিজেপি-র কটাক্ষের মুখে পড়েছেন শোভন-বৈশাখী। বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হা বলেন, "ওদের তো অনেক খাই বেশি। শুনেছি অনেক শর্ত দিয়েছে। সব মেনে নিলে জয়েন করবে হয়ত।" যদিও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে নারাজ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর দাবি, ২১-এর মঞ্চে সবাই নেত্রীর ভাষণ শুনতে আসেন। কে যোগ দেবেন, না দেবেন, তা জানা নেই তাঁর।