কলকাতা: সরস্বতী পুজোর (Sataswati Puja 2023) দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা শেখা শুরু করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। বৃহস্পতিবার রাজভবনে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর সামনেই বাংলায় হাতেখড়ি হয় রাজ্যপালের। রাজ্যপালকে বর্ণপরিচয় উপহার দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এ দিন রাজভবনে রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে যাননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
রাজ্যপালকে বর্ণপরিচয় উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
এ দিন বিকেলে রাজভবনে বাংলায় হাতেখড়ি হয় রাজ্যপালের। লালপাড় হলুদ শাড়ি পড়া খুদে সরস্বতীর কাঁধে গুরুদায়িত্ব পড়ে। হাতে ধরে শ্লেটে রাজ্যপালকে অ-আ লেখা শেখায় খুদে মেয়েটি। তার পর রীতি মেনে স্বরবর্ণ-ব্যাঞ্জনবর্ণ উচ্চারণও করেন রাজ্যপালও। গুরুদক্ষিণাবাবদ খুদে মেয়েটির হাতে তুলে দেন উপহারও।
এর পর রাজ্যপালের হাতেখড়ি নিয়ে বক্তৃতা করেন মমতা। রাজ্যপাল যে বাংলা শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্য়বাদ জানান। মমতা বলেন, "বাংলা বলতে উৎসাহী রাজ্যপাল। আমাদের কাছে এটা গর্বের বিষয়। প্রায়ই তিনি আমাদের কাছে বাংলা বলেন।" মমতা জানান, বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতিই বহুমুখী। দার্জিলিং থেকে কলকাতা, এক এক জায়গায় এক এক ভাষা রয়েছে বলে জানান। স্থানীয় ভাষা শেখা অত্যন্ত জরুরি বলেও জানান মমতা। রাজ্যপালকে উপহার স্বরূপ বর্ণপরিচয় উপহার দেন।
এ দিন রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে বিধানসভার অধ্যক্ষও হাজির ছিলেন। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কলকাতার মেয়র, পুলিশ কমিশনার। বিরোধী দলনেতা অনুষ্ঠানে না গেলেও, ছিলেন তথাগত রায়।
রাজ্যপালের হাতেখড়ি নিয়ে বরং বিজেপি-তৃণমূল বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে। শুভেন্দুর দাবি, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির দাগ তুলতে পরিকল্পনা করে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। এই হাতেখড়ি অনুষ্ঠান রাজভবনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না বলেও ট্যুইটারে লেখেন তিনি। তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে।
রাজ্যপালের বাংলায় হাতেখড়ি নিয়ে এ দিন কটাক্ষ ছুড়ে দেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও। রাজ্যপালের উদ্দেশে তিনি বলেন, "প্রথমেই ভুল মাস্টারের কাছে হাতেখড়ি হলে, ভুলই শিখবেন। তাই ঠিকঠাক মাস্টার চয়ন করুন।" এর পাল্টা দিলীপকে একহাত নেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, "নিজেরা ঠিক ভাবে হাতেখড়ি দিন। না হলে ৭০ থেকে সাতে নেমে যাবেন।"
এর আগে, রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত দেখেছেন রাজ্যবাসী। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকাকালীন নিত্যদিন দু'পক্ষের মধ্যে তৈরি হতো সংঘাতের আবহ। চাঁচাছোলা ভাষায় যেমন রাজ্যের সমালোচনা করতেন ধনকড়, তেমনই তাঁকে বিজেপি-র এজেন্ট বলে কটাক্ষ উড়ে যেত তৃণমূলের তরফ থেকে। ধনকড়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগও তোলেন রাজ্য সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা।
তবে ধনকড়ের উত্তরসূরি সিভি আনন্দের সঙ্গে এ যাবৎ সুসম্পর্কই রয়েছে রাজ্যের। কর্মজীবনের শুরুতে দীর্ঘদিন খাস কলকাতায় কাটিয়েছেন তিনি। তাই বাংলার সঙ্গে নিবিড় যোগের কথা শুরুতেই তুলে ধরেছিলেন। কবিগুরুর কবিতাও মুখস্থ আওড়াতে দেখা গিয়েছিল। পদে আসীন থাকাকালীন বাংলা ভাষাটিকে ভাল করে রপ্ত করে নিতে যান বলেও জানিয়েছিলেন।
ধনকড়ের উত্তরসূরি, সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্যের সুসম্পর্কই রয়েছে
নয়া রাজ্যপালকে রাজ্যে স্বাগত জানানো থেকে, রাজভবনে গিয়ে অভিবাদন জানানো, রাজ্যের তরফেও কোনও খামতি রাখা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং রাজ্যপালকে একহাঁড়ি রসগোল্লা পাঠান। মাঝে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু আইনশৃঙ্খলা-সহ একাধিক বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার পরও রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক তিক্ততায় পর্যবসিত হয়নি।