কলকাতা: তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের খবরে উত্তাল বাংলার রাজনীতি। সেই আবহেই মুখ খুললেন অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তাঁর দাবি, দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) নেত্রী।  শুধু তাই নয়, সোমবার কালীঘাটে মমতার বাড়িতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) যাওয়া নিয়ে যে জল্পনা চলছে, তাও খারিজ করে দিয়েছেন নারায়ণ। তাঁর দাবি, অসুস্থ মমতার স্বাস্থ্যের অবস্থার খোঁজ নিতেই গিয়েছিলেন অভিষেক। (TMC)


তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব চরমে বলে যখন শোনা যাচ্ছে, সেই সময়ই সোমবার কালীঘাটের বাড়িতে মমতার সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছন অভিষেক। মমতার বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায় ফিরহাদ হাকিমকেও। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে শোনা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে নারায়ণ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেত্রী। তিনি অসুস্থ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সাধারণ সম্পাদক, পুত্রসমানও বটে! পিসির খোঁজ নিতে যাবেন না তিনি! এই বিতর্কের মানে হয় না।  সব সময় রাজনৈতিক কারণেই দেখা করা হয় না।"


তৃণমূলের অন্দরে নবীন বনাম প্রবীণের দ্বন্দ্ব চলছে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই সরগরম রাজনীতি। শুধু তাই নয়, দলের অন্দরে পৃথক মমতা শিবির এবং অভিষেক শিবির গড়ে উঠেছে বলেও খবর। সেই নিয়ে লাগাতার বিরোধীদের তরফে কটাক্ষও উড়ে এসেছে। কিন্তু নারায়ণের বক্তব্য, "নেত্রী আমাদের একজনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম-এর একটা ধারণা আছে যে দেহত্যাগ না করলে পদত্যাগ নয়। তার মানে বয়সের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনৈতিক দলও চালাতে হবে। সেই জায়গায় অনেকেই আছেন, যাঁদের সফ্টওয়্যার আপডেট হয়নি, যা দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করা যাবে না। তাই আমাদের মনে হয়েছে প্রযুক্তি এবং সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারে এগিয়ে নতুন প্রজন্ম। বয়স্করা পরামর্শ দেবেন, তা নিয়ে এগিয়ে যাবেন যুবকরা। তাদের উৎসাহ বেশি।"


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: 'নন্দিনী চক্রবর্তীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ' দাবি বিরোধী দলনেতার


রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী তথা দলের বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "দ্বন্দ্ব  ছিল, আছে থাকবে। দ্বন্দ্বের পরই কিন্তু প্রীতির সম্পর্ক হয়! সব দলে দ্বন্দ্ব আছে। দু'টো মানুষকে দেখতেও এক হয় না। এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তিন বার জিতেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছর আমাদের লক্ষ্য, বাংলার মিটিতে বিজেপি-কে শূন্যে নামিয়ে আনা।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই বলেও জানান শোভনদেব। তাঁর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেত্রী। তাঁকেও চাই, সমান ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চাই।  কোনও লড়াই নেই। যে ভাবে দেখানো হচ্ছে, তা ঠিক নয়।"


এর আগে নবীনদের এগিয়ে দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষকে। মমতাই শেষ কথা, কিন্তু অভিষেকের ভূমিকাও কম নন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। মদন মিত্রকেও নবীনদের এগিয়ে থাকার কথা বলতে শোনা যায়। সৌগত রায়ের সঙ্গে বাগযুদ্ধেও জড়ান প্রকাশ্যে। সেই নিয়ে দলের বিভাজনের তত্ত্ব আরও জোর পায়। সেই আবহে মমতা নিজের অবস্থান জানিয়ে দেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, নতুন চাল আগে বাড়ে। দু'টোকেই চাই আমার।" তার পরেও যদিও দ্বন্দ্বের খবরে ইতি পড়েনি। সেই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরাও।