কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jibankrishna Saha) শুধু বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কই নন, বীরভূমের দেবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার মাস্টারমশাইও। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি বলছেন, আসতেন ব্যক্তিগত গাড়িতে। স্কুলে উপস্থিতি বরাবরই অনিয়মিত। অথচ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতন ঢোকে নিয়মিত।


বাংলার মাস্টারমশাই জীবনকৃষ্ণ: নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হননি কোনও মাস্টারমশাই। যে, ভাল হওয়ার পাঠ পড়ুয়াকে দেওয়ার, সেই পাঠ মাস্টারমশাইয়ের নিজের আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। জীবনকৃষ্ণ সাহা শুধু বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কই নন, বীরভূমের দেবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার মাস্টারমশাই। ২০১৪-র ২০ অগাস্ট এই স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান জীবন।


সূত্রের খবর, স্কুলে উপস্থিতি ছিল অনিয়মিত। আসতেন ব্যক্তিগত গাড়িতে। ২০২১ সালে বিধায়ক হওয়ার পর তাঁর উপস্থিতি আরও কমেছিল। ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে এসেছিলেন। তাও, মেরেকেটে দু-একবার। স্কুলে অনিয়মিত। অথচ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতন নিয়মিত। তবে সিবিআই সূত্রে দাবি, তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণর যে বিপুল সম্পত্তির হদিশ এখনও অবধি মিলেছে, তা স্কুল শিক্ষকের মাইনেতে কী করে সম্ভব, সে এক রহস্য়। 


এদিকে জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গেল নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া তৃণমল বিধায়ক, বড়ঞার জীবনকৃষ্ণ সাহার। তথ্য লুকোতে, তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে মোবাইল পুকুরে ছুড়ে ফেলার অভিযোগ সিবিআইয়ের তরফে তোলা হয়েছিল, তল্লাশি অভিযানের মাঝপথে নিজের দুটি মোবাইল ফোন বাড়ির পাশের পুকুরে ছু়ড়ে ফেলে দিয়েছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। প্রায় তিনদিন ধরে পুকুরের জল ছেঁচে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পুকুরের মাটি সরিয়ে শেষে উদ্ধার করা হয় মোবাইল ফোন দুটি। সেই ঘটনা নিয়ে এদিন আদালতের ভিতর ও বাইরে দু'রকম দাবি করলেন ধৃত তৃণমূল বিধায়কের আইনজীবী।

চারদিনের সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষে, শুক্রবার আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ককে। প্রথমেই জীবনকৃষ্ণ সাহাকে আরও ৫ দিন হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। তিনি বলেন, তল্লাশির সময় প্রচুর নথি উদ্ধার করা হয়েছে। এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন। অন্য যাঁরা এই মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত, তাঁদের টাকা ট্রান্সফার করেছেন।

গত শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে মুর্শিদাবাদের আন্দিতে, তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে ম্য়ারাথন তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। তাঁর বাড়িতে, দোকানে, পুকুরে, বাগানে, ঝোপে-জঙ্গলে তথ্য-প্রমাণের খোঁজে চলে চিরুনি তল্লাশি।তল্লাশি ঘিরে তৈরি হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। সিবিআইয়ের অভিযোগ, তদন্তকারীদের অসাবধানতার সুযোগে নিজের দুটি মোবাইল ফোন পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তৃণমূল বিধায়ক। শুক্রবার এই প্রসঙ্গটি আদালতের শুনানিতেও ওঠে। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, নিজের দুটি মোবাইল ফোন ফেলে দিয়ে তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন জীবনকৃষ্ণ সাহা।পাল্টা তৃণমূল বিধায়কের আইনজীবী বলে ওঠেন, ফোনটা সিবিআই বাজেয়াপ্ত করেছিল। তাঁর মেয়ে শিলিগুড়ির স্কুলের পড়ে। রোজ মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। তারওপর রাগ থেকেই তিনি মোবাইল ফোনটি ফেলে দেন। কিন্তু আদালতের বাইরে এসে এদিন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান জীবনকৃষ্ণের আইনজীবী। বলেন, মক্কেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ও ফোন ফেলেনি।


আরও পড়ুন: Howrah News: ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, হাওড়ার হাসপাতালে খোলা হল কোভিড ওয়ার্ড