সন্দীপ সমাদ্দার, ঝিলম করঞ্জাই ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা : আবাস যোজনায় (Awas Yojana) ২০ লক্ষ গরিব বঞ্চিত। তৃণমূলের যে নেতা-কর্মীরা সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের থেকে টাকা ফেরত করাব। ফের হুঁশিয়ারি দিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তৃণমূলে থাকার সময় কী করেছেন বলে বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার (Jayprakash Majumdar)। এদিকে পুরুলিয়া পুরসভার (Purulia Municipality) চেয়ারম্যানের মায়ের নাম আবাস যোজনার তালিকায় থাকায় দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক।


বড় ছেলে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার চেয়ারম্যান ! ছোট ছেলে তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর, স্বামী অবসরপ্রাপ্ত রেল অফিসার। রয়েছে দুটো পাকা বাড়ি !এতকিছুর পরও গৃহকর্ত্রীর নাম রয়েছে আবাস যোজনার নামের তালিকায় !


সমীক্ষার তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক-


২০২০- সালের আবাস যোজনার সমীক্ষার তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। এই তালিকায় ৭৯৩ নম্বরে রয়েছে শঙ্করী মাহালির নাম। যাঁর বড় ছেলে নবেন্দু মাহালি হলেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান। ছোট ছেলে কৃষ্ণেন্দু, তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর। ছোট ছেলেই তাঁর নামে আবাস যোজনায় ঘর পেতে আবেদন
করেছিলেন বলে দাবি মায়ের। যদিও মায়ের দাবির সঙ্গে মিলছে না পুরপ্রধানের যুক্তি !


আবাস তালিকায় নাম ওঠা পুরপ্রধানের মা শঙ্করী মাহালি বলেন, আমার ছোট ছেলে কৃষ্ণেন্দু, ওর কোনও রোজগার নেই। দুটো মেয়ে আছে, মেয়ে দুটো বড় হয়েছে। একটা ঘরে থাকছে, তাই মায়ের নামে ঘর নিয়েছে। বলছে বাবা তো লিখে দেয়নি, তাই করেছে। 


পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, আমার মেজভাই সাফাইকর্মী। ছেলের কথা ভেবে, হয়ত ভুল বুঝে আবেদন করেছিলেন। আধার দিয়ে ফেলেছিলেন, উনি ছেলের বউয়ের নামে করতে বলেছিলেন, কিন্তু ছেলের বউয়ের নামে আসেনি, ওঁর নামেই চলে এসেছে। বর্তমানে তালিকায় নাম নেই।

কোথাও তৃৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী ও শাশুড়ির নাম। কোথাও আবার খোদ প্রধানের নামও দেখা গেছে আবাস যোজনার তালিকায় নাম। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল পুরুলিয়ার ঘটনা। এই প্রেক্ষাপটে আবাস-তালিকায় স্বজনপোষণের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
পাল্টা তৃণমূল আবার এনিয়ে কেন্দ্রের কোর্টে বল ঠেলেছে।


বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের পলিসি। স্টিকার লাগাও, কেন্দ্রের পলিসি নিজের নামে চালাও। উনি অনেকদিন ঢপ মেরেছেন। এবারে আর ঢপবাজি চলবে না। তৃণমূলের পাকা বাড়ির লোক যারা ঘর নিয়েছেন, তাদের টাকা ফেরত করব। কীভাবে ফেরত করাতে হয়, আমরা জানি। আবাস যোজনা নিয়ে আমরা ছাড়ব না। বিরাট ইস্যু। অন্তত দুই থেকে তিন লক্ষ লোককে টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্তত কুড়ি লক্ষ গরিবকে বঞ্চিত করা হয়েছে।


পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, শুভেন্দু যা যা বলছেন অর্ধেক সত্য, কী বলছেন জানে না। উনি তো একসময় দলে ছিলেন, তাহলে তখন কী করেছেন? ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুয়ায়ী প্রকাশ হচ্ছে, ভাল-খারাপ মিলিয়েই আছে। শুধু রাজ্যের উপর হয় না, কেন্দ্রেরও দায়িত্ব আছে।

বিজেপি সুর চড়ালেও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাবার নামও দেখা গেছে আবাস যোজনার তালিকায়। যদিও, গোটা বিষয়টি চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন নিশীথ প্রামাণিক। এই প্রেক্ষাপটে আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূল-বিজেপি, দুই দলকেই নিশানা করেছে সিপিএম।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলছেন, দুর্নীতি শুধু তৃণমূল করছে না, বিজেপিও করছে। তৃণমূল করেও পাচ্ছে না, টাকা দিলে তবে পাচ্ছে।

দোষারোপের পালা জারি রয়েছে। কিন্তু, গরিব মানুষগুলি কবে ঘর পাবে ? সেই উত্তর এখনও অধরা।