সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা :  নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডি-র তলবে হাজিরা দিলেন অয়ন শীলের ছেলের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়। ইমনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা, বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়।


ইডি সূত্রে খবর, বিভাস পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আমলা। এদিন ইডি অফিসাররা সিজিও কমপ্লেক্সে দফতরে ঢোকার আগেই সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ পৌঁছে যান বাবা ও মেয়ে।


কেন তলব ইমনকে


ইডি-র দাবি, অয়নের ছেলে অভিষেকের সঙ্গে দুটি সংস্থায় যৌথ অংশীদারি রয়েছে ইমনের। এছাড়াও, ২০২০-র ২ সেপ্টেম্বর, হুগলিতে এক কোটি টাকা দিয়ে অভিষেক-ইমনের নামে একটি জমি কিনেছিলেন অয়ন। সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইমন ও তাঁর বাবা বিভাসের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তাঁরা কোনওভাবে লাভবান হয়েছেন কি না এবং অয়নের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বাবা ও মেয়ে কী জানতেন, সেটাই জানতে চায় ইডি। 


ইডি-র দাবি, অয়নের ছেলের সংস্থায় যৌথ অংশীদারি রয়েছে ইমনের। তাঁর বাবা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আমলা। সেক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে কোনও কাজ করা হয়েছিল কি না, জানতে চায় ইডি। এর পাশাপাশি, অয়নের আয় বা বিপুল সম্পত্তি সম্পর্কে তাঁর ছেলের বান্ধবী ইমন কিছু জানেন কি না, তাও জানতে চান ইডি-র তদন্তকারীরা। 


অয়নের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কী জানতে পারে ইডি 



নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীল এখন জেলবন্দি!  সম্প্রতি অয়ন শীলের ছেলে অভিষেককেও বিভিন্ন ইস্য়ু নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। ED সূত্রে দাবি, হুগলির গুড়াপে ছেলের নামে ১ কোটি টাকা টাকার সম্পত্তি কেনেন অয়ন। এছাড়া, দ্য় ফসিলস নামে এক কোম্পানির হদিশ মিলেছে, যার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন অভিষেক। ED সূত্রে দাবি, এদিন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কীভাবে কোম্পানির ডিরেক্টর পদে তাঁর নাম?  উত্তরে অভিষেক জানান, তিনি এখানে থাকেন না। দিল্লিতে থাকেন, পড়াশোনা করছেন। তাঁর নামে জমি বা কোম্পানি, এব্য়াপারে কিছুই তিনি জানেন না। বাবা অয়ন শীল যা কিছু করেছেন, তাঁকে না জানিয়ে।


অয়নের স্ত্রী ইডিকে কী জানান


জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন অয়নের স্ত্রী।  ED দফতরে হাজিরা দিতে হয়েছিল অয়ন শীলের বৃদ্ধ বাবা-মাকে। তারপর ED-র প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীকে। তার পরদিনই ED দফতরে হাজিরা দিলেন অয়ন শীলের স্ত্রী কাকলি এবং ছেলে অভিষেক। ED সূত্রে দাবি, অয়নের স্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, FD ব্লকের অফিসে কাদের যাতায়াত ছিল? উত্তরে তিনি জানান, FD ব্লকের অফিসে তিনি বিশেষ যাতায়াত করতেন না। বেশিরভাগ সময় দিল্লিতে ছেলের সঙ্গে থাকতেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে উঠতেন চুঁচুড়ার বাড়িতে। সেখানে বেশ কয়েকবার হুগলির বহিষ্কৃত নেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন কাকলি শীল। আগেই অয়নের নামে ৫০টি ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্ট রয়েছে বলে দাবি করেছিল ইডি। অয়নের স্ত্রীর অ্য়াকাউন্টেও লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয় বলে দাবি। সেই সূত্র ধরেই এদিন তলব করা হয়েছিল অয়ন পত্নীকে। ইডি সূত্রে খবর, কাকলির কাছে জানতে চাওয়া হয়, লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেনের ব্য়াপারে তিনি কতটা জানতেন। উত্তরে কাকলি জানান, তাঁর নামে অ্য়াকাউন্ট হলেও, পুরোটাই দেখতেন স্বামী অয়ন শীল। লেনদেনের ব্য়াপারে তিনি কিছুই জানেন না। অয়নের সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিল কাকলির নাম। ED-র দাবি, সেখানে তাঁর কী ভূমিকা ছিল? এই প্রশ্ন করা হলে, কাকলি শীল জানান, ডিরেক্টর পদে থাকলেও তিনি জানতেনই না সংস্থার কাজ কী। 
পুরোটাই দেখতেন অয়ন। তিনি শুধু জানতেন এটা একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। ED সূত্রে দাবি, কাকলি জানিয়েছেন, প্রোডাকশন হাউজের ব্য়াপারে কিছুই জানতেন না তিনি। শ্বেতার ব্য়াপারেও প্রথমদিকে কিছু জানতেন না। পরে যখন জানতে পারেন, স্বামীকে সাবধান করেছিলেন। এসবের থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন। ED সূত্রে খবর, অয়ন-পত্নীর ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন চাওয়া হয়েছে।