সন্দীপ সরকার, প্রকাশ সিনহা ও সত্যজিৎ বৈদ্য: রাতভর তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদের পরও অবিচল ছিলেন তিনি। সোনা, টাকা, সম্পত্তি কিছুই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে প্রকাশ্য়েই মন্তব্য করেছিলেন। তার পরই CBI জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। সেই আবহেই তাঁর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়াল। তাপস তাঁকে ফাঁসিয়েছেন বলে দাবি প্রবীরের। যদিও তাপসের দাবি, নিজেকে বাঁচাতে এসব করছেন প্রবীর।
তাপসের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরই প্রবীরের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা তাঁর মাধ্যমেই তাপসের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল, CBI সূত্রে এমন দাবিও সামনে আসে। তবে প্রবীরের বক্তব্য, "আমি একটি হোটেলে সাধারণ কাজ করতাম। সেই হোটেলে তাপস সাহা আসতেন কলকাতায় খেতে। সেই সূত্রে পরিচয়। আমাকে আপ্ত সহায়ক করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
যদিও তাপসের দাবি, নিজে বাঁচতে এখন তাঁর নাম নিচ্ছেন প্রবীর। তাপসের বক্তব্য, "এখন গাড্ডায় পড়েছে। এখন বাঁচার জন্য অন্যজনের কোর্টে ফায়ার করছে। লাভ হবে না কিছু।"
আরও পড়ুন: Justice Abhijit Ganguly: 'কে রটাচ্ছে আমি পদত্যাগ করছি?' প্রশ্ন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস এবং তাঁর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক প্রবীরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে CBI. এই প্রবীর আবার আগে রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার হাতেও গ্রেফতার হয়েছিলেন। মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে এভাবেই দায় ঠেললেন তাঁরা। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদও করল CBI.
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার কিছু পরে নিজাম প্যালেসে পৌঁছন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক। রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা নিম্ন আদালতে যে রিপোর্ট জমা দেয়, তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, তেহট্টের তৃণমূল বিধায়কের আপ্ত সহায়ক প্রবীর জেরায় দাবি করেছেন, চাকরি দেওয়ার নামে ৩০ থেকে ৩৬ জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন তিনি। সেই টাকা তাঁর মাধ্যমেই তৃণমূল বিধায়কের কাছে গিয়েছে।
গ্রাফিক্স আউট
সিবিআই সূত্রে দাবি, রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার তদন্তে যেসব তথ্যপ্রমাণ এবং বয়ান মিলেছে, তা খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, দুর্নীতির সঙ্গে যোগ রয়েছে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপসের। সেই সব তথ্যপ্রমাণ ও বয়ানের রেকর্ড সামনে রেখেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাপসকে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার প্রাক্তন আপ্ত সহায়কের অ্যাকাউন্টে দুই মাসে ২ কোটিরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে। যদিও, এ নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর প্রাক্তন আপ্ত সহায়কের গলায় শোনা গেছে সম্পূর্ণ উল্টো সুর। তাপসের দাবি, প্রবীরের অ্যাকাউন্টে কী আজে, জানেন না তিনি। তিনি কোনও লেনদেন করেননি প্রবীরের সঙ্গে। তাঁর চারটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সব তথ্য দিয়েছেন CBI-কে।
আবার প্রবীর জানিয়েছেন, যে ২ কোটি টাকার কথাবলা হচ্ছে। সেটা সরকারি টাকা। সরকারি কনট্রাক্টরের টাকা। তাপস ওই টাকা পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। কারণ ওই টাকা তুলতে বড়বাজার থেকে লোক আসতেন। তাঁদের টাকা মিটিয়ে দিতেন তিনি।
মঙ্গলবার প্রথম দফার জিজ্ঞাসাবাদের পর পৌনে ২টো নাগাদ CBI অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন তাপস। বলেন, "পলিটিক্যাল কেরিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করেছে।" মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দুপুর ৩টে নাগাদ ফের নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে যান তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক।
অন্য দিকে, রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজিরা ছিল তাপসের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক প্রবীর-সহ তিন জনের। সকলেরই জামিনের মেয়াদ ১০ জুলাই পর্যন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।