কলকাতা: ব্যবধান মেরেকেটে এক বছর এক মাস। তার মধ্যেই আমূল পাল্টে গেল বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) রাজনৈতিক পরিচয়। ২০২১ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তার পর ওই বছর ৩ অগাস্ট বিজেপি ত্যাগ করেন। তার এক বছরের মাথায়, ২০২২-এর ৩ অগাস্ট, বাংলার পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে কার্যতই নতুন ইনিংস শুরু করলেন বাবুল। বুধবার রাজভবনে (West Bengal Cabinet Reshuffle) মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন বালিগঞ্জের বিধায়ক।
মমতার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন বাবুল সুপ্রিয়
বাবুলকে ঠিক কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা এখনও পর্যন্ত খোলসা করেনি তৃণমূল সরকার (TMC)। তবে গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগদানের পর, মাত্র সাড়ে ১০ মাসে দলে বাবুলের এই উত্থান রীতিমতো চোখে পড়ার মতোই। এই মুহূর্তে তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবেই শুধুমাত্র গন্য হচ্ছেন না তিনি, দলনেত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek banerjee) প্রিয়পাত্র হিসেবেও নাম উঠে আসছে বাবুলের।
বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাই মমতা এবং অভিষেকের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন বাবুল। তিনি বলেন, ‘‘দিদি তো আছেনই। অভিষেক যে ভাবে পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন, দলের অন্য বড় বড় নেতারাও যে ভাবে পাশে থেকেছেন...ধাপে ধাপে এগোতে সাহায্য করেছেন। ভগ্ন হৃহয় নিয়ে গত ৩ অগাস্ট রাত শেষ হয়েছিল। আজও ৩ অগাস্ট। আর কিছু বলব না।’’ মমতার সরকারে মন্ত্রিত্ব পেয়ে বাবুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিশা খুঁজে পেলাম। খুব ভাল লাগছে।’’
এ দিন রাজভবনে সপরিবারেই শপথ নিতে হাজির হয়েছিলেন বাবুল। তাঁর বড় মেয়েও উড়ে আসেন মুম্বই থেকে। সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গেও খোশ মেজাজেই দেখা যায় বাবুলকে। অথচ বিজেপি-তে থাকাকালীন এই ব্রাত্যর সঙ্গেই একাধিক বার বাদানুবাদে জড়িয়েছেন বাবুল। তবে পুরনো স্মৃতি আর ঘাঁটতে চান না বাবুল। তাঁর কথায়, ‘‘বাদানুবাদ আজও চলতে পারে। মতের মিল না হতেও পারে। তার জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ক কলুষিত হবে কেন!’’ এক সংসারে শামিল বাবুলকে স্বাগত জানিয়ে ব্রাত্যর মন্তব্য, ‘‘কিছুটা বাদ, কিছুটা বিবাদ, আসলে পুরোটাই অনুবাদ।’’
যদিও কয়েক মাস আগে পর্যন্তও ছবিটা ছিল অন্য রকম। সদ্য সদ্য দলে যোগ দেওয়া বাবুলকে কেন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জ আসনটিতে প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল তৃণমূলের অন্দরেই। তৃণমূলের হয়ে মাঠে নেমে বালিগঞ্জ আসনটি বাবুল ধরে রাখতে সক্ষম হলেও, পরাজিত প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর জয়ের ব্যবধান নিয়েও উড়ে এসেছিল কটাক্ষ।
তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী খোদ আবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। নাম না করে দল বদলকারীদের কটাক্ষ করেন তিনি। বালিগঞ্জের ফলাফল নিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একটি জায়গায় উপনির্বাচন হল। সেখানে ভোটটা খুব কমে গেল। ৪১ শতাংশ হয়ে গেল। ভোটিংটাই কমে গেল। প্রচুর নোটা হয়ে গেল আর কী। তার মানে এটা পছন্দ করে না পাবলিক। যদিও জিতে গিয়েছে, মার্জিন কিন্তু বেশি হয়নি। যেখানে ৭০-৮০ হাজার ব্যবধান থাকত, সেটা বোধহয় ২৪ হাজারে এসে ঠেকেছে।" উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের পদ না ধরিয়ে আগে দলের হয়ে খাটানো উচিত বলেও সেই সময় মতামত জানান চিরঞ্জিৎ।
মাত্র সাড়ে ১০ মাসে তৃণমূলে অভূতপূর্ব উত্থান বাবূুলের
তবে এ সব কানে তোলেননি বাবুল। বরং দলের দেখানো রাস্তা ধরেই হাঁটছেন বলে জানিয়েছেন। এমনকি মমতার সরকারে তাঁর কী ভূমিকা হতে পারে তা নিয়ে জল্পনার মধ্য়েও লাগাতার ট্যুইটারে আক্রমণ প্রতিহত করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গতকাল রাতেই তৃণমূলে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বাবুল লেখেন, ‘‘দিদি, অভিষেকের সঙ্গে তৃণমূলে অত্যন্ত সুখে আছি।’’ তার পর, রাত পোহাতেই মন্ত্রিত্ব পেলেন বাবুল।