কলকাতা: বিজেপি ছেড়েছিলেন একবছর আগের ৩ অগাস্ট। আর এক বছর পর, ৩ অগাস্টই রাজনীতিতে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হল। নেহাত কাকতালীয় ঘটনা নয়, রাজনীতিতে তাঁর বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বলে মনে করছেন বাংলার নতুন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। আর এর পুরো কৃতিত্ব তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) দিচ্ছেন তিনি। তাঁর দাবি, রাজনীতি ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। নতুন করে শুরু করার অনুপ্রেরণা এবং সাহস মমতার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন তিনি। তাই ‘‘দিদির হাত ধরেই পোয়েটিক জাস্টিস’’ হল বলে মনে করছেন বাবুল। 


মমতার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন বাবুল সুপ্রিয়


বুধবার মমতার মন্ত্রিসভায় (West bengal Cabinet Reshuffle) জায়গা পেয়েছেন বাবুল। ঠিক কোন দফতরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে তাঁর হাতে, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি যদিও। তবে নতুন দায়িত্ব পেয়ে যারপরনাই খুশি বাবুল। সাড়ে ১০ মাস আগে তৃণমূলে যোগ দিলেও, এ বার দিশা খুঁজে পেলেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজনীতিতে দ্বিতীয় ইনিংসের যাবতীয় শ্রেয় মমতাকেই দিয়েছেন বাবুল। তাঁর সাফ কথা, ‘‘দিদির হাত ধরে পোয়েটিক জাস্টিস এল। আমি তো রাজনীতি ছেড়েই দিয়েছিলাম। উনি যে ভাবে সাহস, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন...বালিগঞ্জ থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন, দল যে ভাবে পাশে থেকেছে, তাতেই জয় এসেছে। আগামী দিনে রাজীনতির দ্বিতীয় ইনিংস যাতে প্রথম ইনিংসের থেকেও উজ্জ্বল হয়, তার জন্য সর্বস্ব দেব আমি।’’


আর এর সঙ্গেই পুরনো দল বিজেপি-র (BJP) বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবুল। বিজেপি-তে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত অন্যায় এবং বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল বলে দাবি তাঁর। রাজভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর এ দিন এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন বাবুল। সেখানে ৩ অগাস্টের সংযোগের প্রসঙ্গ উঠলে বলেন, ‘‘কাকতালীয় কিনা, আপনারাই বিচার করুন। তবে এই একটি বছর আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত বছর ৭ জুলাই আমার মনে হয়েছিল, যে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছিলাম...কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই আমার। আসানসোলের মানুষ ২০১৯-এ তিন গুণ ভোটে জিতিয়েছিলেন আমাকে। আমার মন্ত্রিসভায় প্রকাশ জাওড়েকর সংসদে প্রশ্নোত্তরের জন্য এ প্লাস নম্বর দিতেন। চলার পথে ভুল হতে পারে। কিন্তু ২০১৪ থেকে নিজের সবটা দিয়েছিলাম। কিন্তু মনে হয়েছিল। অত্যন্ত নিষ্ঠুর, অন্যায় আচরণ এবং বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল আমার সঙ্গে। একজন বাঙালি কি মন্ত্রিসভার পূর্ণ মন্ত্রী হতে পারেন না! আমার কথা ছেড়ে দিন। আলুওয়ালিয়াজি কত সিনিয়র মানুষ, কী জ্ঞানের পরিধি! কতবার ওঁর কাছে নানা বিষয় জানতে যেতাম। ওঁকেও অবহেলা করা হয়েছে। কেন মেনে নেব! মেনে নিইনি আমি।’’


আরও পড়ুন: Babul Supriyo: বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে, সাড়ে ১০ মাসেই মন্ত্রী, বাবুল বললেন, ‘দিশা খুঁজে পেলাম’


গত বছর ৩ অগাস্টের আগেও তিনি বিজেপি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বলে জানান বাবুল। তিনি বলেন, ‘‘৭ জুলাই-ই ইস্তফা দিতে যাচ্ছিলাম। তার আগে, ২০১৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দজি পূর্বের বিধায়কদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে বিশেষ প্রাতরাশের আয়োজন করেছিলেন। সেই সময় নানা কথা মাথায় চলছিল। ওই দিন রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে হেঁটেই সংসদভবনে পৌঁছেছিলাম। হাতে লেখা ইস্তফাপত্র দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে। তার আগে, ২০১৭ সালেও ইস্তফা দিয়েছিলাম।’’


বাংলার মন্ত্রী হয়ে বিজেপি-কে একহাত বাবুলের


বিজেপি-তে এবং সর্বোপরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন, ২০১৫ সালে কলকাতায় ভিক্টোরিয়ার সামনে মমতার সঙ্গে বাবুলের ঝালমুড়ি খাওয়ার প্রসঙ্গ আজও বিভিন্ন সময় লোকমুখে ফিরে আসে। বাবুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সেই ঝালমুড়িপর্ব নিয়ে তাঁকে খোঁটাও দিয়েছিল বিজেপি। এ দিন মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরও সেই ঝালমুড়ি পর্ব ঝালিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। তবে বাবুলের সাফ যুক্তি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেই কাজ চালানো উচিত বলে মনে হয়েছিল তাঁর। রাজ্যে কোনও কাজ করতে গেলে যে মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য প্রয়োজন, সে কথা বোঝার মতো বুদ্ধি তাঁর ছিল। তাই সেই মতোই কাজ করেছেন। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে যাঁরা উঠতে পারেন না, যাঁদের মানসিকতা সঙ্কীর্ণ, তাঁরাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বলে মত বাবুলের।