সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায়: নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে (Santanu Banerjee) গ্রেফতার করল ইডি। একটি ছাত্রভোটের সূত্রে যুব তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের নজরে এসেছিলেন এই শান্তনু। সেখান থেকেই তাঁর উত্থান শুরু হয়। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে জেলা পরিষদের কর্মাধ্য়ক্ষ হয়েছিলেন। এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগেই ইডি-র হাতে গ্রেফতার হলেন তিনি (SSC Case)।


ED সূত্রে দাবি, নিয়োগের ক্ষেত্রে রেট নির্ধারণ করেছিলেন শান্তনু


নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার আরও এক তৃণমূল নেতা। কুন্তল ঘোষের পর এবার ED-র জালে যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু, যিনি আবার তৃণমূল পরিচালিত হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্য়ক্ষও। ED সূত্রে দাবি, প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, সংগঠিত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রেট নির্ধারণ করেছিলেন শান্তনু।

নিয়োগ দুর্নীতির এই মামলায় শান্তনুর নাম প্রথমবার উঠে এসেছিল মানিক ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের মুখে। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে, এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শান্তনর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন তাপস মণ্ডল। বলেছিলেন, "চাকরি প্রার্থীরা আমায় বলে কুন্তল চাকরি করে দেবে, আমার তখন সন্দেহ হয়, আমি কুন্তলকে বলি কী করে করে দেবে, সে বলে আমার লোক আছে, যে কালীঘাটের সরাসরি কানেকশন আছে। নাম কে? শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। পোস্ট কী...পোস্টও বলেছিল। আপনি এই কথা সিবিআইকে বলেছেন, তাপস বলছে, হ্যাঁ বলেছি। কার কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হবে, সেটাও শান্তনু বলে দিয়েছিল।"


যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বাবা বিদ্য়ুৎ বণ্টন নিগমের কর্মী ছিলেন। শান্তনুদের একটি মোবাইল ফোনের দোকান ছিল।
সেই সঙ্গে তাঁরা গাড়ি ভাড়া খাটাতেন। চাকরি করতে করতেই শান্তনুর বাবার মৃত্য়ু হয়। সেই চাকরি পান শান্তনু। একটি ছাত্রভোটের সূত্রে যুব তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের নজরে আসেন তিনি। ২০০৭ সালে তাঁকে বলাগড় ব্লকের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি করা হয়।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তিনি তারকেশ্বর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন।


আরও পড়ুন: Santanu Banerjee: বাবার মৃত্যুতে চাকরি, মোবাইল ফোনের দোকানও ছিল, নিয়োগ দুর্নীতিতে এ বার জালে শান্তনু

হুগলি জেলার রাজনীতিতে যুব তৃণমূল নেতা শান্তনুর প্রভাব কতটা ছিল, তা নিয়ে তাঁর গ্রেফতারির পর মুখ খুলেছেন, বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্য়াপারী।


গত ২০ জানুয়ারি হুগলির বলাগড়ে যুব তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বাড়িতে হানা দেন ইডি অফিসাররা। সেদিন শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি ঘিরে কার্যত নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। সকাল সাড়ে নটা নাগাদ সেখানে যান ইডির অফিসাররা। বাড়ির সামনের গেটের চাবি না পাওয়া যাওয়ায়, বেশ কিছুক্ষণ বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তদন্তকারীদের।

এর পর, কিছুটা নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। সিআরপিএফ-কে সঙ্গে নিয়ে, কার্যত দৌড়ে বাড়ির পিছনের দিকে যান ইডি অফিসাররা। চাবি দিয়ে বাড়ির সামনের দিকের দরজা খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, তা না হওয়ায়, পরে, পিছনের দিক দিয়ে, বাড়িতে ঢোকেন অফিসাররা।

শান্তনুর বাড়িতে অভিযানের দিনই ইডি তল্লাশি চালিয়েছিল যুব তৃণমূলের আরেক নেতা কুন্তল ঘোষের বাড়িতে। তারপর কুন্তলকে গ্রেফতার করা হয়। ইতিমধ্য়েই তাঁকে জেরায় একাধিক নাম এবং চাঞ্চল্য়কর সব তথ্য় সামনে এসেছে। এবার গ্রেফতার হলেন যুব তৃণমূলের আরেক নেতা শান্তনু।


কুন্তল ও শান্তনুকে মুখোমুখি জেরায় কি নতুন তথ্য় জানা যাবে, উঠছে প্রশ্ন

আগামীদিনে কুন্তল ও শান্তনুকে মুখোমুখি জেরায় কি নতুন তথ্য় জানা যাবে? সামনে আসবে রাঘব বোয়ালদের নাম? যখন পার্থ-অর্পিতা-মানিক-সুবীরেশ-কল্য়াণময়-শান্তিপ্রসাসদ সিনহারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখনও প্রশ্ন উঠেছিল, মাথা কে, চাঁই কে। আবার এখন যখন শান্তনু-কুন্তল-তাপস গ্রেফতার হচ্ছেন, সোমা-বনিদের ইডি জি়জ্যাসাবাদ করছে ইডি, তখনও সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, এই পিরামিডের মাথায় কে?