আবির দত্ত ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মৌলবাদীরা যখন প্রতিদিন হিন্দুদের মারছে, ঘর পোড়াচ্ছে, মন্দির ভাঙছে, তখন হিন্দুদের ওপর লাগাতার অত্য়াচার নিয়ে সরব হলেন সেদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের একাংশ। মাতৃভূমির জন্য দুঃখ বুকে নিয়েই ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন ভারতে আসা বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস বলেন, ' আমরা একই পরিবারের মানুষ। আর এক পরিবারের মানুষ হিসাবে আমাদের সামগ্রিক দায়িত্ব যেনও আমরা পালন করতে পারি। যে যার দায়িত্ব যেনও পালন করতে পারি। সেখানে পথ্যটা মূখ্য বিষয় এবং প্রতিকারও। একটা হল পথ্য, আরেকটা হল প্রতিকার। 'বাংলাদেশের হিন্দু আইনজীবী বলেন,'সমগ্র বাংলাদেশের হাজার হাজার সংখ্য়ালঘুদের নামে মিথ্য়া ও হয়রানিমূলক মামলা প্রদান করা হয়। পাঁচ শতাধিকের ওপরে নিরীহ সংখ্য়ালঘুদের আহত করা হয়, শতাধিকের ওপর ঘরবাড়ি লুঠপাট করা হয়। সেবক কলোনিতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়, বহু মন্দির ভাঙচুর করা হয়।'
মহম্মদ ইউনূসের মুখ আর মুখোশ এখন স্পষ্ট। মুখে শান্তির বুলি, বাস্তবে আগুনের বলি।বেছে বেছে হামলা হচ্ছে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে। তছনচ করে দেওয়া হচ্ছে মন্দির। কিন্তু ইউনূস সরকার কিংবা কট্টরপন্থীদের এই আচরণ মন থেকে মেনে নিতে পারছে না বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিকদের একটা বড় অংশ! দেশে যা চলছে, তাতে চরম ক্ষুব্ধ তাঁরাও।চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছেন জিতু মিয়া। ঢাকার বাসিন্দা জিতু মিয়া বলেন, অত্যাচার, লুঠপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, এগুলো ৫ অগাস্টের পর থেকে শুরু হয়েছে। হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন মহম্মদ ফিরোজ। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা অশান্তিতে ভীত তিনিও। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা মহম্মদ ফিরোজ বলেন, অল্প দিনের জন্য এসেছি। এই যে বাংলাদেশে ফিরে যাব, আমার কোনও সিকিউরিটি নেই। বাংলাদেশের আজকের ছবি দেখে আজ বুক কাঁপছে ,একদা ওপার বাংলার বাসিন্দারাও। একসময় বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন অমরনাথ দত্ত।
তিনি পরিবার নিয়ে এখন কলকাতায় থাকলেও, আত্মীয়-স্বজন সবাই এখন বাংলাদেশেই থাকেন। তাদের মুখেই যা শুনছেন তাতে আতঙ্কে ঘুম উড়েছে গোটা পরিবারের। কলকাতার বাসিন্দা অমরনাথ দত্ত বলেন,'মহিলারা শাখা সিঁদুর পরে বেরোতে পারছে না। হিন্দু বুঝে গেলে সমস্যা। প্রচুর মেয়ে নিখোঁজ। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মৌলবাদীরা বাড়ি বাড়ি হামলা করছে। রাত্রিবেলা অত্যাচার করছে। চাকরি করলে ছাড়তে হবে। নাহলে ধর্মান্তরণ করতে হবে। তালিবানি কায়দায় করা হচ্ছে। '
একই অভিজ্ঞতা সঞ্জয় দে-রও। কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় দে বলেন, 'বাড়িঘর ভাঙচুর। ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। কোন কোন জেলায় হিংসা হচ্ছে, সেই নাম বলছে। জমি নিয়ে নিচ্ছে। আইনজীবীদের এখনও হুমকি। বাড়ি ঘিরে রয়েছে। 'বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্য়াচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট মুসলিম নাগরিকরা। যেখানে তাঁরা লিখেছেন, 'বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তা ইসলামের নীতি এবং হজরত মহম্মদের দেখানো পথের পরিপন্থী। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের সরকার এনিয়ে কড়া ব্য়বস্থা নেবে এবং হিন্দু-সহ সংখ্য়ালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।'
আরও পড়ুন, বাংলার ২০ জেলায় পেট্রোলের দরে বদল ! আজ জ্বালানি ভরাতে খরচ কত ?
সিটিজেন্স ফর ফ্রেটারনিটি-র তরফে লেখা এই চিঠিতে সই করেছেন প্রাক্তন মুখ্য় নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্য়ান্ট গভর্নর নাজিব জং, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য জামিরউদ্দিন শাহ, প্রাক্তন সাংসদ শাহিদ সিদ্দিকি-সহ অনেকে। চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে , 'এটা সবথেকে বিরক্তিকর, যে নিজ ধর্মের লোকেদের রোষে পড়ার ভয়ে, আইনজীবীরা একজন ক্ষতিগ্রস্তর হয়ে সওয়াল করতে দাঁড়াচ্ছেন না। এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা আমাদের করতেই হবে। সংখ্য়ালঘুদের ওপর এই অত্য়াচারের নিন্দা করে, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে ব্য়বস্থা নিন।'
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।