কলকাতা : কোথাও ভূতুড়ে তালিকা ! একজনেরই নাম উঠেছে ৫ বার। অথচ উপভোক্তার কোনও অস্তিত্বই মেলেনি। কোথাও আবাস যোজনায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। এই অবস্থায় আবাস-তালিকা নিয়ে দিকে দিকে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় রাজ্য়ের আবাস তালিকায় উঠল রেশন ডিলারের নাম। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গেছে জেলায়। যাচাইয়ের পর নাম বাদ যাবে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। অন্য়দিকে, আবাস যোজনায় দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে পুরুলিয়ায় রাজ্য় সড়ক অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাজ্য়ের আবাস যোজনা ঘিরে জেলায় জেলায় অভিযোগের পাহাড়। 'বাংলার বাড়ি'র সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে জারি ক্ষোভ-বিক্ষোভ। এই প্রেক্ষাপটেই রাজ্য়ের আবাস যোজনা ঘিরে ফের নতুন অভিযোগ সামনে এল। এবার আবাস তালিকায় জাতি বদলে নাম উঠল দোতলা বাড়ির মালিক রেশন ডিলারের। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গেছে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায়।
কাঁকসার বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মৃণালকান্তি ঘোষ। পেশায় রেশন ডিলার তিনি। স্থানীয় জামদোহা এলাকায় তাঁর দোতলা বাড়ি রয়েছে।
সেই মৃণালকান্তি ঘোষের নাম উঠেছে রাজ্য়ের আবাস তালিকায়। শুধু তাই নয়, তালিকায় সাধারণ জাতির মৃণালকান্তির নামের পাশে তপশিলি জাতি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দিতে চাননি মৃণালকান্তি ঘোষ।
বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে তৈরি হয় তালিকা। যাতে ৭৭৪ জনের নাম ছিল। এ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, "আমরা পরীক্ষা করব। যদি তাঁর প্রাপ্য় না হয়। রেশন ডিলার যদি মাসে পনেরো হাজার টাকার বেশি ইনকাম হয় এমনি বাদ হয়ে যাবে। যাচাই হচ্ছে তার পরের তালিকা এখনও টাঙানো হয়নি। যারা এই ধরনের আশঙ্কা আছে জানাবেন আমরা ব্য়বস্থা নেব।"
যদিও এই ইস্যুতে আক্রমণ শানিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা বিজেপি সহ সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পঞ্চায়েতের সদস্য়রা দুর্নীতি করছেন। এর বিরুদ্ধে অবিলম্বে এই লোকের নাম বাতিল করে আদিবাসী, তপশিলি সম্প্রদায়ের মানুষের হাতেই এই বাড়ি তুলে দিতে হবে এই দাবি আমরা জানাচ্ছি। না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।"
এদিকে, 'বাংলার বাড়ি' প্রকল্পের সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় অভিযোগ-ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্য়াহত। রাজ্য়ের আবাস তালিকায় দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি-ঝালদা রাজ্য় সড়কের চড়িদা মোড়ে পথ অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভকারী সুকুরমণি কালিন্দী বলেন, 'আমরা গরিব লোক। আমরা বুঝতে পারি না আমরা কেন ঘর পাইনি? কী কারণে পাইনি? কীসের কারণে আমরা পাব না? ঘর পাব না কীসের কারণে ? জল পড়ছে। ওইরকমভাবে ঘুমোচ্ছি আমরা।'
প্রায় চল্লিশ মিনিট পথ অবরোধের জেরে যানজট তৈরি হয়। পরে BDO-র আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
ভূতুড়ে নাম !
এদিকে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় আবাস তালিকায় ভূতুড়ে নাম। একজনেরই নাম উঠেছে ৫ বার। অথচ উপভোক্তার কোনও অস্তিত্বই মেলেনি। কাটোয়া ২ নম্বর ব্লকের জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের আমডাঙা ও মুস্থলি গ্রামে সমীক্ষায় গিয়ে হতবাক বিডিও অফিসের কর্মীরা। আবাস তালিকায় সুদেষ্ণা রায়ের নাম রয়েছে ৫ জায়গায়। উপভোক্তার নাম এক হলেও, বাবা ও স্বামীর নাম আলাদা। দু'টি গ্রামে ৫টি আলাদা ঠিকানায় সুদেষ্ণা রায়ের বাবা ও স্বামীকে খুঁজে পেলেও উপভোক্তাকে পাওয়াই যায়নি।
বিজেপির দাবি, ভুয়ো নামের আড়ালে এভাবেই আবাস-দুর্নীতি চলছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তারাই ভূতুড়ে নামের বিষয়টি সামনে এনেছে। সরকারি কর্মীদের ভুলে এই গন্ডগোলের কারণে দল বিপাকে পড়ছে। যদিও ভুলের কথা অস্বীকার করেছেন কাটোয়া ২ নম্বর ব্লকের BDO।
আমরা-ওরা
আবাস যোজনায় আমরা-ওরার অভিযোগও উঠেছে। পটাশপুরে। বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা ঘর চাইলে তাঁদের দাদার কাছে যান। আমরা দলীয়ভাবে প্রধান ও কর্মীদের বলে দিয়েছি কীভাবে ঘর পেতে হবে। বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন পটাশপুরের তৃণমূল নেতা।
পাকা বাড়ির মালিকের নাম তালিকায়
এদিকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে এবার সমীক্ষার কাজ শুরু করল দক্ষিণ ২৪ পরগানার নামখানা থানার পুলিশ। গত পরশু নামখানা পঞ্চায়েত এলাকায় তালিকা খতিয়ে দেখলেন নামখানা থানার OC বিভাস সরকার। দেখা গেল, তালিকায় নাম থাকা ২ জনের পাকা বাড়ি রয়েছে। তাঁদের দাবি, আবেদনের সময় কাঁচা বাড়ি থাকলেও, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে ধারদেনা করে পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। অন্যদিকে, কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের অনেকেরই নাম নেই আবাস-তালিকায়। ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য।
কাকদ্বীপের মহকুমা শাসক জানিয়েছেন, এখন ২০২২-এর তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন আবেদন করারও সুযোগ রয়েছে।