পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: এক বছর আগের মূর্তি বিতর্ক ফিরল বাঁকুড়ার পুয়াবাগানে। গত বছর অমিত শাহ যে মূর্তিতে ফুল দিয়েছিলেন, আজ সেই মূর্তিতেই বিরসা মুন্ডা স্মরণে মাল্যদান করলেন বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক। বিরসা মুন্ডা নয়, শিকারির মূর্তিতে মালা দিয়ে আরও একবার আদিবাসী সমাজকে অসম্মান করল বিজেপি, ফের সুর চড়িয়েছে তৃণমূল।


এক জায়গা। এক মূর্তি। আদিবাসী আন্দোলনের নায়ক বিরসা মুন্ডাকে শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হল দু-দুবার! গত বছর ৫ নভেম্বর বাংলা সফরে এসে বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামের পুয়াবাগানে বিরসা মুন্ডা স্মরণে এই মূর্তিতে ফুল দেন অমিত শাহ। তারপরই তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। প্রথমে আদিবাসী সমাজের একাংশের তরফে দাবি করা হয়, মূর্তিটি বিরসা মুন্ডার নয়, একজন আদিবাসী শিকারির। এরপরই আদিবাসী সমাজকে বিজেপি অপমান করেছে, এই অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানায় তৃণমূল। 


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিরসা মুণ্ডার নামে অন্য কাউকে মালা দিয়ে অপমান করবে কেন?  রাজ্য সরকার বিরসা মুণ্ডার মূর্তি স্থাপন করবে। বিরসা মুণ্ডার জন্মদিনে রাজ্য সরকারি অফিস ছুটি থাকবে।’


বিতর্কের মধ্যেই বাঁকুড়ায় পুয়াবাগানে বিরসা মুন্ডার মূর্তি তৈরির উদ্যোগ নেয় তৃণমূল। তার জন্য স্থানীয় আদিবাসী পরিবারের থেকে শাসক দলের তরফে মাটি সংগ্রহ করা হয়। সেই ঘটনার পর এক বছর পার। বিরসা মুণ্ডার নতুন মূর্তি এখনও তৈরি হয়নি। শনিবার পুয়াবাগানে গিয়ে আদিবাসী আন্দোলনের নায়ককে স্মরণ করে, সেই মূর্তিতেই মালা দেন বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। 


বিজেপিকে কটাক্ষ করে বাঁকুড়ার তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান (সাংগঠনিক) শ্যামল সাঁতরা বলেছেন, ‘গুরু যখন মালা দিয়ে গেছেন ওই শিকারির গলায়, বিধায়কও সেই পথেই যাবেন। এই মালা পড়ানো মানে আদিবাসীদের অপমান করা ও বিরসা মুন্ডাকে অপমান করা। এই অপমানের জ্বালা আদিবাসী সমাজ ভোটে বুঝিয়ে দিয়েছে। উনি দল থেকে ছিটকে যাওয়ার পথেই এ কাজ করেছেন। বিরসা মুন্ডার অবশ্যই মূর্তি হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।’


পাল্টা বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি দানা বলেছেন, ‘এক বছর আগে বলেছিলেন যে ওখানে এই করে দেব, সেই করে দেব। ভাল করে মূর্তির উন্মোচন করব। আজ তো এক বছর পেরিয়ে গেল। সেই তথৈবচ। আদিবাসী সমাজের বিরসা মুন্ডাকে স্মরণ করেই ওখানে মালা দিয়েছিলেন সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তা স্মরণ করেই আমি মালা দিলাম।’


গত বছর নভেম্বরে বাঁকুড়া সফরে এসে পুয়াবাগানে আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মধ্যাহ্ণভোজ সারেন অমিত শাহ। পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়, তাঁদের গুরুতর অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা দিল্লির এইমসে করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি বলে দাবি বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামের আদিবাসী পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে এদিন বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে গিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আশ্বাস দেন বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক।