পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: চার বছর আগে ভেঙে গিয়েছে বাঁকুড়ায় গন্ধেশ্বরী নদীর সেতু। বাঁকুড়া পুরসভার উদ্যোগে শুরু হয়েছে অস্থায়ী কাঠের সেতু তৈরির কাজ। কিন্তু কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এখনও পর্যন্ত একটি পিলারও তৈরি হয়নি। নতুন সেতু তৈরি না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। কাটমানির কারণেই প্রতিবছর অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়, অভিযোগ বিজেপির। দ্রুত তৈরি হবে দীর্ঘস্থায়ী কাঠের সেতু, আশ্বাস পুরসভার।
২০১৭-র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁকুড়া শহরের সঙ্গে বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের সংযোগকারী গন্ধেশ্বরী নদীর সেতু। ২০১৮-র গোড়ায় শুরু হয় নতুন সেতু তৈরির কাজ। অভিযোগ, বছর গড়ালেও সেতু তৈরির কাজ সেভাবে এগোয়নি। ফলে যাতায়াতে সমস্যায় পড়েছেন বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের কয়েক হাজার বাসিন্দা। শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে ঘুরপথে।
বাঁকুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গন্ধেশ্বরী নদী। সেই নদীর উপর ছিল একটি সেতু। ২০১৭ সালের বন্যায় সেই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর স্থানীয় মানুষ অন্য একটি স্থায়ী ও উঁচু সেতুর দাবি জানান। স্থানীয় মানুষের সেই দাবি মেনে পুরনো সেতুটিকে ভেঙে ২০১৮ সাল থেকে গন্ধেশ্বরী নদীর উপর সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ এতটাই ধীরগতিতে চলছে যে সেতুর একটা পিলারও এখনও পর্যন্ত উঠল না।
গন্ধেশ্বরী নদীর আশেপাশে শতাধিক গ্রাম রয়েছে। কয়েক হাজারেরও বেশি মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন। অফিস-আদালত, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের হয় গন্ধেশ্বরী সতীঘাটের অস্থায়ী সেতু পারাপার করতে হয়, না হলে ৬ কিলোমিটার ঘুরপথে বাঁকুড়া শহরে আসতে হয়। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়ক ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা ভেবে বাঁকুড়া পুরসভার তরফ থেকে প্রতি বছর ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে অস্থায়ী রাস্তা করা হয়। প্রতি বছর বর্ষা এলেই গন্ধেশ্বরী নদীর জলের তোড়ে ভেঙে যায় সেই অস্থায়ী রাস্তা। কিন্তু এ বছর বাঁকুড়া পুরসভা স্থানীয় মানুষের কথা মাথায় রেখে শুরু করল কাঠের সেতুর তৈরির কাজ।
এই সেতু তৈরি নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির অভিযোগ, কাটমানির ভাগ নিতেই স্থায়ী সেতু তৈরি নিয়ে চলছে গড়িমসি। বিজেপি রাঢ়বঙ্গ জোনের আহ্বায়ক পার্থ কুণ্ডুর অভিযোগ, ‘বছর বছর সরকারি টাকা তছরুপ হচ্ছে। কাটমানির ভাগ পাওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। পাকা সেতু তৈরির কাজে ঢিলেমি করা হচ্ছে কেন?’
বাঁকুড়া পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বাঁকুড়া পুরসভার প্রশাসক অলকা সেন মজুমদার বলেছেন, ‘গন্ধেশ্বরী নদীর ওপর কাঠের সেতু তৈরি হচ্ছে। করোনার জন্যে কাজে দেরি হচ্ছে। এবার দীর্ঘস্থায়ী কাঠের সেতু তৈরি হচ্ছে।’
সেতু তৈরির কাজ খতিয়ে দেখতে বুধবার এলাকায় যান বাঁকুড়া পুরসভার প্রশাসক। রাজনৈতিক তরজায় সেতু তৈরির কাজ যেন আর না পিছোয়, আপাতত সেটাই চান বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দারা।