পূর্ণেন্দু সিংহ, সুতান (বাঁকুড়া) : বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার পথে প্রায় পুরোটাই ঘন জঙ্গলে ঢাকা । বারো মাইল জঙ্গলের গাছের চাঁদোয়া ঢাকা মসৃণ পিচ ঢালা রাস্তা ধরে পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে বেশ কিছুটা এগোলেই পড়ে সুতান ।


রানিবাঁধ ব্লকের সুতান । সময় যেন এখানে থমকে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার বছর। সে অর্থে পর্যটকদের ভিড় নেই এখানে। নেই কোলাহল, নেই ধোঁয়া ধুলোর দূষণ । হাজারো ব্যস্ততা আর ছুটে চলা নাগরিক সভ্যতা থেকে যোজন দূরে একাকী পড়ে থাকা সুতান প্রকৃত অর্থেই প্রকৃতির এক অমূল্য সৃষ্টি । 
সুতান আসলে একটি উপত্যকা । চারিদিকে ঘন জঙ্গলে ঢাকা উঁচু টিলা দিয়ে ঘেরা একটি ছোট্ট জলাধার । জলাধারের একপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে ছোট্ট পাহাড়ি ঝোরা । কিছু দূর গিয়ে সেই ঝোরা হারিয়ে গেছে ঘন জঙ্গলে । পাথরের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে চলা সেই ঝোরার মৃদু কুলকুল শব্দই সুতানে তৈরি করেছে এক আলাদা আবহ। সুতানের নিস্তব্ধতা এতটাই যে দিনের বেলাতেও সেখানে স্পষ্ট শোনা যাবে ঝিঝি পোকার ডাক, পাতা পড়ার শব্দ । দিনভর পাখিদের গাছে গাছে উড়ে বেড়ানো আর জলাধারের জলে নীল সাদা মেঘের আনাগোনা দেখতে দেখতে এখানে সময় কেটে যায় পর্যটকদের ।


দেখুন কেমন জায়গা সুতান :


রায়া দাস নামে এক পর্যটক বলেন, প্রতি বছর আমরা ভ্রমণে যাই। শেষবার আমরা গেছিলাম সিমলা। ওটা তো ঠান্ডার পাহাড়। এটা হচ্ছে জঙ্গল জাতীয় জায়গা। খুবই সুন্দর। সরকারিভাবে এই জায়গাটির আরও উন্নতি করা দরকার যাতে আরও বেশি মানুষ আসতে পারে। উপভোগ করতে পারে। এখানে এসে শুনলাম, এই জায়গাটা তো আগে ঘোরাঘুরির মতো ছিল না। এখন দেখছি, কয়েকটা গাড়ি আসছে ঘুরতে। এখানে আরও উন্নতি করার দরকার আছে। এই সুন্দর ভিউ মানুষ দেখুক, জানুক । বড় বড় জায়গায় তো লোকে যায়। পুজোর আগে আমাদের এখানে ঘোরাটা খুব সুন্দর হয়েছে।


শুভঙ্কর নামের এক পর্যটক বলেন, করোনায় কোথাও বের হতে পারছিলাম না। চাইছিলাম, একটু পাহাড় হবে, একাকিত্ব হবে। করোনার প্রভাবটা খুব একটা থাকবে না। আমরা এখানে এসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছি। যথেষ্ট ভাল এলাকা, আর এখানে সম্পূর্ণ অক্সিজেন আছে । আমাদের জন্য কাছাকাছির মধ্যে সুতান বেস্ট। বন্ধুবান্ধবদের গিয়ে বলব সুলতান আসার জন্য।


স্থানীয় রঘুনাথ বেশরা বলেন, একটা সময় রাস্তাঘাট ছিল না। সুরঙ্গ রাস্তা ছিল। সরকার আসার পর রাস্তাঘাট হয়েছে। এখন খুব ভাল রাস্তা হয়েছে। একটা সময় মাওবাদী এলাকা ছিল। তখন খুব ভয় ছিল। বাড়ি থেকে মানুষ বেরতো না। এখন সুতান পরিষ্কার হয়ে গেছে। শান্তি ফিরে এসেছে। পর্যটকরা আসছে। এখন মোটামুটি ভাল লাগছে। 


বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, জঙ্গলমহলে সুতান ও তালবেড়িয়া পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। কত সুন্দর জায়গা রয়েছে, পুকুর-ঝরনা-পাহাড় রয়েছে। জেলা পরিষদের তরফ থেকে আরও সুন্দর করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে । বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প করেছি। আগের থেকে অনেকটা উন্নত হয়েছে। জঙ্গল হলেও নিরাপদ শান্তির জায়গা। আমরা চাই, পর্যটকেরা আসুক, দেখুক পাহাড় জঙ্গল ঝরনা। কোনও পর্যটক এখানে এলে মানসিকভাবে শান্তি পাবে।