পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: পঞ্চায়েতে বোর্ড (Panchayat Board) গঠনের জন্য অপহরণ-সন্ত্রাসের অভিযোগ। তাতে নাম জড়াল বিজেপির (BJP)। বাঁকুড়ার ওন্দায় ঘুরপথে বোর্ড দখলের জন্য তাঁদের দুই জয়ী প্রার্থীকে অপহরণ করেছে বিজেপি। অভিযোগ তৃণমূলের। পুলিশ সূত্রে দাবি, বিজেপির জেলা পার্টি অফিস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিনজনকে। পাগলের প্রলাপ বলে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। যাঁদের অপহরণের অভিযোগ, তাঁরা কেউ মুখ খুলতে চাননি। 


জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) বেলাকোবা হোক অথবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর, রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে, একাধিক জায়গায়, জয়ী বিরোধী প্রার্থীদের অপহরণ করে, জোর খাটিয়ে তৃণমূলে টানার অভিযোগ উঠেছে। যে সব পঞ্চায়েত এখনও ত্রিশঙকু। অথবা যেসব পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের দৌড়ে বেকায়দায় রয়েছে তৃণমূল।মূলত সেই সব জায়গাতেই শাসকদলের বিরুদ্ধে অপহরণ-সন্ত্রাস-গান পয়েন্টে রেখে দলে যোগদান করানোর রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে।


এই প্রেক্ষাপটে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ী বিরোধী প্রার্থীদের বোর্ড গঠন পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ঠিক এমন একটা আবহে গেরুয়া ঘাঁটি বাঁকুড়ার ওন্দায় দেখা গেল উলটপুরাণ। পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের জন্য অপহরণ-সন্ত্রাসের অভিযোগে বিদ্ধ এবার বিজেপি। এই হল ওন্দার চূড়ামণিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। ১১ আসনের এই গ্রাম পঞ্চায়েতে এবার তৃণমূল জয়ী হয়েছে ৭টি আসনে। বিজেপির ঝুলিতে রয়েছে ৩টি এবং ১টি আসনে জয়ী হয়েছে সিপিএম। 


তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁদের দুই জয়ী সদস্যকে অপহরণ করে, নিজেদের দলে যোগদান করিয়ে, সিপিএম সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠনের পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। ওন্দা তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরেই তাঁদের টিকিটে জয়ী চূড়ামণিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই সদস্য সঞ্জয় মাণ্ডি এবং বন্দনা রায়কে অপহরণ করা হয়। তুলে নিয়ে যাওয়া হয় জয়ী তৃণমূল প্রার্থী বন্দনা রায়ের স্বামীকেও। তৃণমূল সূত্রে দাবি, বন্দনা রায়ের পরিবারের তরফে ওন্দা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। যে তিনজনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে, বুধবার সকালে তাঁদের বাঁকুড়া জেলা আদালতে পেশ করে পুলিশ।


পুলিশ সূত্রে দাবি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখে, মঙ্গলবার রাতেই বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার পার্টি অফিস থেকে ৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের পরিবারের তরফে কারও নাম করে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। কে বা কারা ৩ জনকে নিয়ে গিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছে তৃণমূল। অপহরণের অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা বিঁধেছে গেরুয়া শিবির।


আরও পড়ুন, TMC অঞ্চল সভাপতির হাতে বান্ডিল বান্ডিল নোট ! ভাইরাল ভিডিওয় তোলপাড়


ওন্দা ব্লক সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেস উত্তমকুমার বিট বলেছেন, 'বিজেপির জঘন্য রাজনীতি। বোর্ড গঠন করতে পারছে না। আমাদের লোকেদের তুলে নিয়ে গিয়ে, জোর করে জয়েন করিয়ে, বোর্ড গঠনের মতলব।' বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি অমরনাথ শাখা বলেন, 'ছাগলে কিনা খায় পাগলে কিনা বলে। ভোট লুঠ, ব্যালট গেলা তৃণমূলের বৃত্তি।  দুনিয়াময় ডাকাতি চুরি করে এখন কিডন্যাপের অভিযোগ করছে। এবিষয়ে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। যারা অভিযোগ করেছে তারাই জানে।' যদিও তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সদস্য-সহ যে তিনজনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।