তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: সিকিমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাজে গিয়েছিলেন দ্বারিকার শেখ সুমন। তিস্তার ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতির পর, তিন দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পরিবারের সাথে। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পরিবার।


বন্যা পরিস্থিতির পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন 


 বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা গ্রামের বছর ২৪ এর শেখ সুমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর কাজে গিয়েছিল সিকিমের জেমা এলাকায়। তিস্তার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পর, তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি পরিবারের লোকজন। উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে বারংবার বিষ্ণুপুর থানায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। সুমনকে ফোন করলে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও খোঁজ মেলেনি শেখ সুমনের।


বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর জেঠু ও জেঠিমার কাছে মানুষ


পাঁচ মাস আগে সিকিমে গিয়েছিলেন শেখ সুমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের জন্য। বিষ্ণুপুর একটি বেসরকারি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করে সে। প্রথমে কিছু মাস ওড়িশার একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। এর পর পাঁচ আগে সিকিমে একটি কোম্পানিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হিসাবেকাজে যোগদান দেয়। বছর ১৫ আগে সুমনের বাবা-মায়ের মৃত্যু হয় তারপর থেকেই জেঠু ও জেঠিমার কাছে মানুষ।


গত ৩ অক্টোবর পরিবারের সাথে শেষ বারের মতো কথা হয়


গত ৩ অক্টোবর পরিবারের সাথে শেষ বারের মতো কথা হয়। পরিবারকে জানিয়েছিল বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ। ডিসেম্বর মাসে বিষ্ণুপুর মেলার সময় সে বাড়ি ফিরবে। কান্নায় ভেঙে পড়ছে পরিবার। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন যাতে তাদের ছেলে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরে। কবে ফিরবে বাড়িতে সুমন সে আশায় বুক বেঁধেছে পরিবার পরিজন।


মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান


বুধবার ভোরের দিকে সিকিমের লোনাক হ্রদের মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে যে হড়পা বান এসেছিল, তার জেরে ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে হিসেব এখনই করা অসম্ভব। আপাতত শক্তিমন্ত্রক জানিয়েছে, বন্যার জলস্তর কিছুটা নামলে সিকিমের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ বিশদে খতিয়ে দেখবে। তবে  সিকিমের অন্যতম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র NHPC-র তরফে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে, যত দ্রুত তার কাজকর্ম ফের শুরু করা যায়।


২২ হাজারেরও বেশি মানুষ বিপদগ্রস্ত বলে প্রশাসনের আশঙ্কা


এখনও পর্যন্ত যা শোনা যাচ্ছে, তাতে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। যদিও এঁদের মধ্যে মেরেকেটে ২ হাজারের মতোকে উদ্ধার করা গিয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এসবের মধ্য়ে আশার ক্ষীণ আলো দেখিয়েছে একটি খবর। সিকিমের মুখ্যসচিব ভি বি পাঠকের দাবি, সেনার ২৭তম মাউন্টেন ডিভিশনের আধিকারিকরা তাঁকে জানিয়েছেন যে লাচেন, লাচুং এবং উত্তর সিকিমের বাকি লাগোয়া এলাকাগুলিতে যে পর্যটকরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকে নিরাপদ রয়েছেন। 


আরও পড়ুন, শিক্ষকরা ক্লাস না করিয়ে মিছিলে অংশ নেবেন ! বিস্ময়প্রকাশ বিচারপতির


পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি-সহ সিকিমে এই মুহূর্তে অন্তত হাজার তিনেক পর্যটক আটকে রয়েছেন। তাঁদের দিকে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে ওই পর্যটকদের পরিবারের উদ্বিগ্ন সদস্যদের কথা বলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়। পর্যটকদের উদ্ধারে কড়া নজর রয়েছে সিকিম প্রশাসনের। আপাতত যা স্থির হয়েছে, তাতে মঙ্গন পর্যন্ত তাতে আকাশপথে উড়িয়ে আনা হবে। বাকিটা সড়কপথে আনার ব্যবস্থা করা হবে। সিকিমের মুখ্যসচিব আরও জানান, আবহাওয়া আর না বিগরোলে আগামীকাল থেকেই লাচেন এবং লাচুংয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। সেনা এবং ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার সেই জন্য তৈরি রয়েছে, বলেও জানান তিনি।