পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: মহালয়ার (Mahalaya) পরের দিন থেকেই জমিদার বাড়ির চৌহুদ্দির মধ্যে বেজে উঠে নহবতের সুর। আজও সেই সুর জানান দেয় শুরু হলো চৌধুরী জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজা। প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের বেশি প্রাচীন পুকুর খননে পাওয়া নিম কাঠের দ্বিভুজা দুর্গা (Durga) আজও জমিদারবাড়িতে পুজিতা হন দেবী। কালের স্রোতে বিলীন হয়েছে জমিদার ও জমিদারী। ভাঙা চুন-সুড়কির জমিদারদের ইমারত মনে করিয়ে দেয় চৌধুরী জমিদারদারদের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের এক স্মৃতি জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। আজও নিয়ম মেনে চৌধুরী বাড়িতে দেবী আরাধনায় মেতে ওঠেন বর্তমান জমিদার বাড়ির সদস্যরা।


পুজোর ইতিহাস


বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের চৌধুরী জমিদার দামোদর নারায়ণ চৌধুরী এর নাম অনুসারেই গ্রামের নামকরণ হয় দামোদরবাটি। কথিত আছে চৌধুরী পরিবারের আদি পুরুষ তৈলক্যনাথ গুহ বাংলাদেশের যশোরের জমিদার ছিলেন। বর্গিদের হাত থেকে বাঁচতে যশোর ছেড়ে হাজির হয়েছিলেন মল্লগড় বিষ্ণুপুরে। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা আশ্রয় দিয়েছিল ওই জমিদারকে। পরবর্তীকালে চৌধুরী উপাধি দেন মল্ল রাজারা। মল্লরাজাদের সৌজন্যে দামোদরবাটিতে পত্তন হয় চৌধুরী জমিদারদের জমিদারি । মল্লরাজারা ওই চৌধুরী জমিদারদের প্রচুর জমি জায়গা দান করেন। পরবর্তীকালে দামোদর নারায়ণ চৌধুরী এর সময় মল্লরাজাদের সৌজন্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে চৌধুরী জমিদারদের বহর। মল্লরাজারা ১৩টি মৌজা তালুকদান করেন চৌধুরী জমিদারদের। আর্থিক ভাবে চৌধুরী জমিদাররা সমৃদ্ধি লাভ করে। দামোদরবাটিতে শুরু হয় চৌধুরী জমিদারদের বড় বড় বাড়ি এবং নানান পুজো অর্চনা।


আরও পড়ুন, "উনি কি আজকাল বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ান? গুলি করার কথা বলেন কিভাবে"? অভিষেককে তোপ দিলীপের


শোনা যায় গ্রামের বড়পুকুর খননের সময় নিম কাঠের দুর্গার দ্বিভুজা মূর্তি কুড়িয়ে পান চৌধুরী পরিবারের বংশধর। তারপর থেকেই চৌধুরী পরিবারে শুরু হয় দুর্গাপুজা। পরিবারের দাবি তাঁদের এই পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন। জমিদার বাড়ির ভাঙাচোরা বড়ো বড়ো বাড়ি আজও জানান দিচ্ছে তাঁদের ইতিকথা। ভাঙাচোরা, চুন সুরকি খসে পড়া জরাজীর্ণ জমিদার বাড়ির অন্দরে রয়েছে দুর্গাদালান সেখানেই প্রাচীন নিয়ম মেনে আজও দুর্গাদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা। আজও জমিদার বাড়ির দুর্গা দালানে বেজে ওঠে নহবতের সুর মুর্ছনা। এখানের প্রতিমা একটু অন্যধরনের। এখানে নিমকাঠের দেবী দুর্গা দ্বিভুজা। উপরে মহাদেব। দেবীর পাশে কার্তিক, গনেশ, লক্ষী স্বরসতী। মল্লরাজাদের মৃন্ময়ীর কাঠামো অনুরুপ চৌধুরী জমিদার বাড়ির দুর্গা। বৈষ্ণব মতে পুজো পাঠ, সপ্তমাদি কল্পারম্ভে এখানে দেবীর আরধনা করা হয়। প্রাচীন তালাপাতার চন্ডী পাঠ করা হয় জমিদার বাড়ির দুর্গাদালানে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই পুজো পরিচালনা করছেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা।


দামোদরবাটি গ্রামের আদি দুর্গাপূজা চৌধুরী জমিদারদের এই পুজো। যা বড় মেলা নামেই পরিচিত। জমিদারদের হাতে গড়া পুজোতে এতটুকুও খামতি রাখতে চায়না পরিবারের সদস্যরা। পুজোর সময় যে যেখানেই থাকুক শিকড়ের টানে ছুটে আসে পুজোর কটাদিন একসাথে আনন্দে মেতে উঠতে। জমজমাট গল্প আড্ডায় জমে ওঠে জমিদার বাড়ির দুর্গা দালান। পুজোর আনন্দের মধ্য দিয়ে মনে করিয়ে দেয় পুরানো সেই দিনের কথা। মায়ের আরাধনার মধ্য দিয়ে খুশি ও আনন্দের মাঝে ফিরে আসে জমিদার বাড়ির সেই নস্টালজিয়া।