তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া : গত পরশু রাত থেকে টানা বৃষ্টি। জলের তলায় কয়েকশো বিঘা জমির সবজি ! আর তার জেরে প্রচুর ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর ও পূর্ব নবাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার সবজি চাষিরা।


এতদিন অল্প একটু বৃষ্টির আশায় বসেছিলেন বাঁকুড়া জেলার আমন চাষিরা । কিন্তু, হাজারো হাপিত্যেশ করেও দেখা মেলেনি বৃষ্টির। ক্রমাগত বাড়তে থাকে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ। স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কায় ছিলেন চাষিরা। আদৌ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হবে তো ? কিন্তু, চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়ে নামে বৃষ্টি। জুন ও জুলাই মাস জেলার আমন চাষিদের নিরাশ করলেও, অগাস্ট মাসের গোড়া থেকেই চিত্রটা পাল্টাতে শুরু করেছে। নিম্নচাপের জেরে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। ৩১ জুলাই রাত থেকে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে বাঁকুড়া জেলায়। কখনো হাল্কা ঝিরঝিরে, তো কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে জেলা জুড়ে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় বাঁকুড়া জেলায় বৃষ্টি হয়েছে মোট ৬৮.৯ মিলিমিটার। গত ৪৮ ঘণ্টায় যার পরিমাণ ১৬৩.৭ মিলিমিটার।


একটানা এই বৃষ্টিতে মুখে হাসি ফুটেছে বাঁকুড়া জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের রুক্ষ্ম অংশের আমন চাষিদের। তবে, ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সোনামুখী ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার সবজি চাষিরা। কারণ, নিচু এলাকায় থাকা সবজির জমিতে জল জমেছে। এদিকে এখনও বৃষ্টি চলছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ও আগামীকাল ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বাঁকুড়ায়। তেমনটা হলে সোনামুখী, পাত্রসায়ের,  ইন্দাস, কোতুলপুর-সহ বিভিন্ন ব্লকের নিচু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে এলাকায়।


প্রসঙ্গত, পশ্চিমে সরছে নিম্নচাপ। এর প্রভাবে আজও রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হবে। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গেও দু’-এক পশলা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টির জেরে থাকছে জল জমার সমস্যাও। তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টি কমবে। প্রসঙ্গত, উত্তর বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ অতি গভীর নিম্নচাপ পরিণত হয়ে ক্রমশ পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে। কিছুটা দুর্বল হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশ এবং ঝাড়খণ্ডের উপর অবস্থান করছে।


এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল দিঘার সমুদ্র। ঢেউয়ের ধাক্কায় ওড়িশা থেকে আসা ট্রলার বিকল। ভাসতে ভাসতে দিঘার ওশিয়ানা ঘাটের কাছে চলে আসে ট্রলার। তাতে ওড়িশার ১৩ জন মৎস্যজীবী ছিলেন। সকলকে সুরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বাড়ি ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর ফিসারমেন ও ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাকি ট্রলারগুলিকেও সমুদ্র থেকে দ্রুত ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সতর্ক প্রশাসন। দিঘায় সমুদ্র উত্তাল থাকায় গার্ডওয়াল টপকে রাস্তায় জল চলে আসছে। সতর্কতা হিসেবে উপকূলে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। পুলিশের তরফে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। সমুদ্র স্নানে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পর্যটকদের আটকাতে সমুদ্র সৈকত দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।