পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: এখনও যন্ত্রনা দগ্ধ মাধ্যমিকের প্রথম দিনের স্মৃতি। মূলত মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনই জলপাইগুড়ি জেলায় হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে এক পরীক্ষার্থীর। তারপরই হাতির হানা নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয় রাজ্য জুড়ে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৎপরতা বৃদ্ধি পায় বনদফতরেরও। স্বাভাবিকভাবেই এরপরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি বন দফতর। দামোদর (Damodar River) পেরিয়ে দুর্গাপুর পানাগড় শিল্পাঞ্চল লাগোয়া কসবার জঙ্গলে ঢুকে পড়া দলছুট দাঁতালকে  (Elephant) ফেরাল বনদফতর (Forest Department)।


গতকাল রাতে একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতাল হাতি দামোদর নদ পেরিয়ে পৌঁছে যায় বর্ধমানের কসবার জঙ্গলে। খবর পেতেই  তড়িঘড়ি বাঁকুড়া উত্তর, বর্ধমান ও পাঞ্চেৎ বনবিভাগ যৌথ ভাবে কসবার জঙ্গলে হাতিটিকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে । আজ ভোরে হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে কাবু করে বন দফতর। এরপর তাকে ট্রাকে চাপিয়ে আনা হয় বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে। বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে হাতিটিকে ঝাড়গ্রামের গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হবে। 


প্রসঙ্গত, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসাই হয়নি জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বাসিন্দা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে, হাতির হানায় মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের। রাজগঞ্জের পাঁচিরাম নাহাটা। স্কুলের ছাত্র অর্জুন দাসের সিট পড়েছিল বেলাকোবা কেবলপাড়া হাইস্কুলে। সময় বাঁচাতে ফরেস্ট রোড ধরে মোটরবাইকে যাচ্ছিল বাবা ও ছেলে। কুয়াশার কারণে হাতির সামনে পড়ে যায় তারা। বাবা প্রাণে বাঁচলেও ছেলেকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারে দাঁতাল। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এই ঘটনায় রেঞ্জারদের সতর্ক থাকতে বলার পাশাপাশি,  জলপাইগুড়ির জেলাশাসক ও গৌতম দেবকে মৃত পরীক্ষার্থীর বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  


আরও পড়ুন, গোয়ালপোখর গুলিকাণ্ডে গ্রেফতার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান-সহ ২


হাতি উপদ্রবের জেরে বাঁকুড়ার জঙ্গল লাগোয়া তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্রকে বিপজ্জনক হিসাবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে বন দফতর। এই তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্র হল বড়জোড়া হাইস্কুল, বেলিয়াতোড় হাইস্কুল ও গদারডিহি হাইস্কুল। সূত্রের খবর, যথেষ্ট সংখ্যক হুলা পার্টি মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রথম জঙ্গল লাগোয়া ২০টি গ্রাম থেকে শতাধিক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া আসার ব্যবস্থা করেছে বন দফতর। এরজন্য মোট ১৪টি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য ইলেকট্রিক ফেন্সিং রয়েছে এমন রুটকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র সেই রুট ধরেই পরীক্ষার্থীদের নিয়ে গাড়িগুলির যাতায়াতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।