বাঁকুড়া: বকেয়া ডিএ (DA) নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শাসকের কোপে প্রধান শিক্ষক! (Teacher) 'দিদির দূত' মালা রায়কে (Mala Roy) বকেয়া ডিএ (DA) নিয়ে প্রধান শিক্ষকের প্রশ্ন। প্রশ্ন তুলতেই বাঁকুড়ার (Bankura) গঙ্গাজলঘাটিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি। প্রশ্নকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তৃণমূল নেতার (TMC Leader)। দেরিতে আসা থেকে মিড ডে মিল চুরির একাধিক অভিযোগ তৃণমূলের। ডিএ নিয়েই বেশি ব্যস্ত, প্রশ্নকারী প্রধান শিক্ষক নিয়ে অভিযোগ সাংসদেরও। শোকজ করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি তৃণমূল নেতার। 


গতবছর ডিসেম্বর মাসে ডিএ ইস্যুতে রাজ্যকে তোপ দাগেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। 'ডিএ রাজ্য সরকারকে দিতেই হবে। আর ডিএ যেদিন দিতে হবে, সেদিন এই রাজ্যে বেতন বন্ধ হবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেও টান পড়বে।' ঠিক এই ভাষাতেই রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানালেন শুভেন্দু অধিকারী। রানাঘাটের সভা থেকে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা একের পর এক আক্রমণ শানান রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের আর্থিক হাল যে খারাপ, সেই প্রসঙ্গ ফের একবার সামনে তুলে ধরেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের তাঁদের প্রাপ্য ডিএ থেকে বঞ্চিত করছে রাজ্য সরকার। খয়রাতির রাজনীতির জেরে ঋণে জর্জরিত বঙ্গের সরকার। তাই ডিএ দিতে হলেই রাজ্যে বেতন বন্ধ হয়ে যাবে বলেই হুঁশিয়ারি তাঁর। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ডিএ রাজ্য সরকারকে দিতেই হবে। তাঁর ডিসেম্বর ডেডলাইনের দিন-ব্যাখ্যায় একটি দিন সুপ্রিম কোর্টের ডিএ মামলার শুনানির দিন হিসেবে ধরা ছিল বলেই জানিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।


তিনি দাবি করেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ দিন সামনেই রয়েছে। বাঙালি বিচারপতিরা সরে যাওয়াতে মামলা জানুয়ারি মাসে পিছিয়ে গিয়েছে শুধু। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'চোরগুলো বাংলার বেকারদের বঞ্চিত করে চাকরি চুরি করেছে'। তাঁর হুঁশিয়ারি, '৯৫২ জনের চাকরি গিয়েছে, সবে তো শুরু। ৫৮ হাজার চাকরি জালিয়াতি হয়েছে, নদিয়ার বিধায়ক এখন জেলে।' যাঁদের চাকরি যাবে তাঁদের নিয়ে মিছিলের কথাও বলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, 'আগামী কিছুদিনের মধ্যেই সংখ্যাটা ২০-২৫ হাজারে পৌঁছবে। যাঁদের চাকরি যাবে, তাঁদের নিয়ে মিছিল করে যাব কালীঘাটে।' ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গও উঠে আসে শুভেন্দুর বক্তব্যে। তিনি বলেন, 'ভোট লুঠ করে ২০১৮-য় পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছে তৃণমূল। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ লক্ষের বেশি ভুয়ো ভোটার কার্ড বেরিয়েছে।সংখ্যাটা ১০ লক্ষ পেরিয়ে যাবে।'


আরও পড়ুন, কলকাতা পুরসভার আর্থিক সঙ্কট, 'মাইনে-পে কমিশনে বাড়তি দিতে হচ্ছে', দাবি ফিরহাদের


কলকাতা হাইকোর্টের বকেয়া DA মেটানোর রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। অন্যদিকে, বকেয়া DA নিয়ে রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ মানেনি, এই অভিযোগে রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৩টি সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে  সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দেয়, আপাতত আদালত অবমাননার মামলার শুনানি হবে না হাইকোর্টে। পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের DA-র ফারাক ছিল ৩৪ শতাংশ।  ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী সেই ব্যবধান বেড়ে হয় ৩৫ শতাংশ। পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী যে ৩৪ শতাংশ DA-র ফারাক ছিল, তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায়, গত ২০মে , কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ৩ মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA মেটাতে হবে। রাজ্য সরকার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানালেও ২২ সেপ্টেম্বর তা খারিজ করে দেয় আদালত। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৪ নভেম্বর, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রাজ্য সরকার। গত ৫ডিসেম্বর, সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টে চলা অবমাননা মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়ে সব পক্ষকে নোটিস দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।