পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : অপরাধ রুখতে প্রযুক্তির সাহায্য নিল বাঁকুড়া পুলিশ (Bankura Police)। গোটা শহর মুড়ে ফেলা হল সিসি ক্যামেরায়। যানজট মোকাবিলাতেও নেওয়া হবে সিসি ক্যামেরার (CC Camera) সাহায্য, জানালেন পুলিশ সুপার। এই উদ্যোগে খুশি বাঁকুড়াবাসী।
গৃহস্থের বাড়িতে চুরি, রাস্তায় ছিনতাই, দোকানে ডাকাতি, মহিলাদের শ্লীলতাহানি। গত কয়েকমাসে বাঁকুড়া শহরে একের পর এক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। অবশেষে তৎপর হল পুলিশ। অপরাধদমনে এবার থেকে নেওয়া হবে প্রযুক্তির সাহায্য। বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হল সিসি ক্যামেরা। নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, শহরের এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট, ধর্মীয় স্থান, বাজার এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
পুলিশ যা জানাচ্ছে-
পুলিশ সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত ১০৩টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেছেন, এলাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। পুরসভার সাহায্য নিয়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো হল।
আরও পড়ুন ; লাল গাড়ির সূত্র ধরে বাঁকুড়ার ব্যবসায়ী খুনের কিনারা ! গ্রেফতার অভিযুক্ত
পুলিশ-প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি বাঁকুড়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা দেবেন্দ্র আগরওয়াল বলেন, ভাল উদ্যোগ। আমার বাড়িতে চুরি হয়েছে। সিসি ক্যামেরা ছিল না। এবার আটকাতে পারবে।
গায়ত্রী বিশ্বাস নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, সিসি ক্যামেরা থাকায় দুষ্কৃতীরা ভয় পাবে...মহিলারা নিরাপদে বেরোতে পারবেন। পুলিশ সূত্রে খবর, বাঁকুড়া সদর থানায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হবে। যানজট এড়াতেও সিসি ক্যামেরার সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাঁকুড়া পুলিশ।
দিনকয়েক আগে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে রাস্তায় ধারে ঝোপের মধ্যে সোনা ও রুপো ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। গত ২৩ জুলাই বাঁকুড়া থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ওই ব্যবসায়ী। ওই দিন বাঁকুড়ায় ব্যবসায়ীর বাইক পাওয়া গেলেও, তাঁর খোঁজ মেলেনি। এরপর খাতড়া-মুকুটমণিপুর রাস্তায় বাগজোবড়া রাস্তার ধারে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, ওই মৃতদেহ নিখোঁজ ব্যবসায়ী শুভঙ্কর দে(৩৬)-র। পরিবারের ধারণা, ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। এক সপ্তাহের মধ্যে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বাঁকুড়া শহরের ইন্দারাগোড়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর দে। গত ২৩ জুলাই কাজ সেরে শীঘ্রই ফেরার কথা জানিয়ে বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন ওই যুবক। এরপরে পরিবারের লোকজন ফোন করলে মোবাইলের সুইচ অফ পান। দীর্ঘ সময় পরে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকের সন্দেহ হয়। পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে ঘটনার কথা জানিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার। এরপরে বাঁকুড়া শহরের কলেজ মোড়ের রাস্তায় উদ্ধার হয় ওই যুবকের বাইক। বাঁকুড়ার খাতড়া থানার পুলিশ একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে মুকুটমণিপুর লাগোয়া বাগজোবড়া এলাকার রাস্তার ধারে ঝোপ থেকে। ওই মৃতদেহ শনাক্ত করে শুভঙ্করের পরিবার। পরিবারের দাবি, ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে শুভঙ্করকে। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। খাতড়ার এসডিপিও এর নেতৃত্বে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। যেখান থেকে বাইক উদ্ধার হয় সেখান থেকে ২৩ তারিখ সন্ধ্যা থেকে সিসিটিভিতে গাড়ির নজরদারি শুরু করে তদন্তকারী দল। সিসিটিভির সৌজন্যে এক লালগাড়ির হদিস পায় পুলিশ।
এরপরে তদন্তকারী পুলিশ শুভঙ্করের বন্ধুদের কার লাল গাড়ি রয়েছে সেই খোঁজ শুরু করে। শুভঙ্করের বাঁকুড়া শহরে একটি বন্ধুর খোঁজ পাওয়া যায়, যার লাল গাড়ি রয়েছে। ওই বন্ধুর মোবাইলের গতিবিধি জানার পরে সন্দেহ ঘনীভূত হয় পুলিশের। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়ার লালবাজার থেকে জাকির ইকবাল খিলজি নামে শুভঙ্করের বন্ধুকে আটক করে খাতড়া থানার পুলিশ। পুলিশি জেরায় খুনের কথা শিকার করেছে সে, এমনই দাবি পুলিশের। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে গাড়ি করে তুলে নিয়ে গিয়ে বাঁকুড়া থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরে ফেলে দেয় বলে পুলিশকে জানায় অভিযুক্ত যুবক।