পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া শহরের সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে পুরসভা গ্রিন সিটি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
শহরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে বাঁকুড়া পুরসভা ২০১৯ সালে উদ্যোগ নিয়েছিল গ্রিন সিটি প্রকল্পের। বাঁকুড়া শহরের রাস্তার দুই ধারেই হকাররা ব্যবসা করতেন। বাঁকুড়া পুরসভার পক্ষ থেকে আলোচনা চালিয়ে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য অন্য একটি জায়গা বরাদ্দ করেছিল। হকারদের বাঁকুড়া পুর এলাকার একটি নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বাঁকুড়া শহরের কৃষক বাজার এলাকায় হকারদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা বলা হয়েছিল। এরপর বাঁকুড়া পুরসভার তরফ থেকে কলেজ রোড থেকে শুরু করে মাচানতলা- বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশে তার দিয়ে লোহার খুঁটি লাগিয়ে রাস্তার দুই পাশের ফেন্সিং করা হয়। সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু গাছ রাস্তার ধারে লাগানো হয়েছিল। নগর উন্নয়ন দপ্তরের তরফ থেকে গ্রিন সিটি প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রায় ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা ফেন্সিং ও বেশ কয়েকটি পার্কে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।
কিন্তু এরপরও শহরের রাস্তাঘাট হকারমুক্ত হয়নি। বেশ কিছু হকার কৃষক বাজারে উঠে গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রাস্তাগুলিতে ফেন্সিং-এর পাশে বসেই অনেক হকারই ব্যবসা-বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। তার ফলে বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন রাস্তার যানজটের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ফেন্সিংয়ের যে লোহার তারের নেট গুলো রয়েছে সেগুলিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন হকাররা। পুরসভার যে গাছগুলি ফেন্সিংয়ের ভেতর লাগানো হয়েছিল, সেগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিক, বোতল, পলিথিন পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আরও কিছু কিছু জায়গায় ফেন্সিং এর তার, খুঁটির অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক তরজা।
এক হকার বলেছেন, আমরা অসহায়, নিরুপায় হয়েই রাস্তার ধারে ব্যবসা করছি। গ্রিন সিটি প্রকল্পের ফলে ফেন্সিং ও গাছপালা লাগানোর ফলে জায়গা কিছুটা ছোট হয়ে গিয়েছে। আমাদের যে জায়গা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ব্যবসার মতো পরিস্থিতে নেই। কারণ, ওদিকে মানুষের যাতায়াত নেই। কাজেই পেটের তাগিদে তো কিছু করে খেতে হবে। গ্রিন সিটি প্রকল্পের কিছু দেখছি না।
বাঁকুড়া শহরের এক বাসিন্দা বলেছেন, এটা নিত্যকার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন যাতায়াতের সময় মেন রোডের ওপর যানজট হচ্ছে। রাস্তার মিডল ও সাইড ব্লকের জন্য রাস্তায় যানজট হচ্ছে। গ্রিন সিটির তো কিছুই চোখে পড়ে না। চারদিক ভেঙেচুরে গিয়েছে। দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে। এখানকার বাসিন্দা হিসেবে চাই, সবসময় শহর যেন পরিচ্ছন্ন থাকে।
বিজেপির রাঢ়বঙ্গ জোনের কনভেনর পার্থ কুণ্ডু বলেছেন, পুরো পরিকল্পনাই ছিল লোক দেখানো। হকাররা নির্দিষ্ট পেন্টিংয়ের বাইরে গিয়ে ব্যবসা করছেন। ফলে যানজট হচ্ছে। সৌন্দর্যায়নের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মস্যাৎ করা হয়েছে। প্রকল্পের অবস্থাতেই তার প্রমাণ রয়েছে। আগামী নির্বাচনে মানুষ এর জবাব দেবেন।
বাঁকুড়া পৌরসভার বোর্ডের প্রশাসক সদস্য গৌতম দাস বলেছেন, গ্রিন সিটি প্রকল্পে শহরের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। বাঁকুড়া শহর জেলার প্রাণকেন্দ্র। আমরা দেখেছি পুজোর সময় গ্রাম গঞ্জের মানুষ বাঁকুড়া শহরের পুজোর মার্কেটিং করতে আসছেন। এই কারণে বাঁকুড়া শহরের যানজটের সৃষ্টি হয়। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা চারপাশে যে হকাররা বসেছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বিগত পুরবোর্ড সবাইকার পুনর্বাসনের জন্য কৃষক বাজারে একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল এবং কিছু কিছু হকার ওখানে গেছেনও। বর্তমানে যে হকার মাচানতলা ও তার আশেপাশে ব্যবসা করছে তারা পুজোর পর আস্তে আস্তে চলে যাবেন। বিজেপির মনগড়া কথা বলছেষ। বাঁকুড়ার উন্নয়ন দেখে ওদের মাথা খারাপ হয়েছে। বাঁকুড়ার বিজেপির সাংসদ উন্নয়নের জন্য কোনও কাজই করেননি। পুরভোটের আগে এ সব অভিযোগ করে ওরা হাওয়া গরম করতে চাইছে।