তুহিন অধিকারী, বিষ্ণুপুর: শুক্রবারের পর বুধবার, পাঁচদিনের ব্যবধানে দু-দু’বার ঘুষ (Bribery) ও তোলাবাজির (Extortion) অভিযোগ তুলে মাওবাদীদের (Maoist) নামে খুনের হুমকি-চিঠি (Threat)! আতঙ্কে বাঁকুড়ার (Bankura) বিষ্ণুপুর (Bishnupur) শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা কুণ্ডু। 


'কিষাণ মাণ্ডি'র নামে পাঠানো লাল কালিতে বাংলা ও ইংরাজীতে লেখা একাধিক চিঠি আজ তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে। হুমকি-চিঠিতে খুনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে। দুশ্চিন্তায় প্রধান শিক্ষিকা ও তাঁর পরিবার। তাঁর দাবি, পাঁচদিনের মধ্যে মাওবাদীদের নামে দু’বার হুমকি-চিঠি পেয়েছেন। দু’টি চিঠিই দেওয়া হয়েছে তাঁর স্কুলের ঠিকানায়।


প্রথম চিঠি পাওয়ার পরেই থানায় নালিশ জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। তারপরেও দ্বিতীয় দফায় তাঁর নামে যে হুমকি চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার কোনওটায় লেখা হয়েছে, ‘তোলা ও ঘুষ নেওয়ার জন্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মুণ্ডু নেওয়া হবে। সময় রাত দেড়টা।’ কোনও চিঠিতে আবার লেখা, ‘আপনাকে তোলা ও ঘুষ নেওয়া বন্ধ করতে হবে।’


আরও পড়ুন পুলিশের চর সন্দেহে একই পরিবারের চার সদস্যকে খুন করে গাছে ঝোলাল মাওবাদীরা


সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রতিটি চিঠির নিচেই উল্লেখ রয়েছে ‘Maoist’ শব্দটি। খামে চিঠির প্রেরক হিসেবে নাম রয়েছে কিষাণ মাণ্ডি ও কৌশল্যার। তাঁদের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে খড়গপুর। গত মাসের শেষের দিকে কিষেণজির মৃত্যুর বদলা চেয়ে মাওবাদীদের নামে পোস্টার পড়েছিল বাঁকুড়ার প্রতিবেশী জেলা পুরুলিয়ায়। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামেও মাওবাদীদের নামে একাধিক পোস্টার নজরে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই চিঠি নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রধান শিক্ষিকার পরিবার। 


হুমকি চিঠি পাওয়া প্রধান শিক্ষিকা বলেছেন, ‘এর আগে গত ১৮ তারিখ এই ধরনের একটি চিঠি পেয়েছিলাম। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। ফের এই ধরনের আরও একটি চিঠি এল। প্রথমবারের চিঠি সাধারণ ডাকে এলেও দ্বিতীয়বারের চিঠিটি স্পিডপোস্টের মাধ্যমে এসেছে। মাওবাদীদের নামে বার বার এই ধরনের হুমকি চিঠি আসায় আমি যথেষ্ট আতঙ্কিত। প্রথমবার ১২ তারিখে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এবারের চিঠিতে ২৮ তারিখ রাত দেড়টার সময় খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’


এই প্রধান শিক্ষিকার স্বামী, পেশায় অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেছেন, ‘লেখা আছে মার্ডার করা হবে ২৮ তারিখে রাত দেড়টায়। মাওইস্ট লেখা আছে। কিন্তু আমার মনে হয় না। স্কুলে তোলাবাজি আর ঘুষের ব্যাপার নেই। তবুও ফ্যামিলিম্যান তো। আতঙ্ক না হলেও দুশ্চিন্তা রয়েছে।’


বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও সম্পর্ক নেই। বিষ্ণুপুর শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের কোনও ছাত্রীই এই চিঠি দিয়ে থাকতে পারে।