দুর্গাপুর: শ্যুটআউটে নিহত কয়লা মাফিয়া রাজু ঝায়ের বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলল (Raju Jha)। দুর্গাপুরের বিধাননগরের অভিাজত এলাকায় প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে তাঁর। রাজু বড় ছেলে সেই বাড়িতে থাকেন বলে খবর। সূত্রের খবর, দুর্গাপুরে এলে রাজুও সেই বাড়িতেই থাকতেন। এ ছাড়াও বিহারেও বাড়ি রয়েছে রাজুর। সেখানে থাকেন তাঁর স্ত্রী এবং ছোট ছেলে। এর পাশাপাশি বাগুইআটি এবং ইএম বাইপাসের ধারেও রাজুর ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গিয়েছে (Saktigarh Shootout)।


আগে সিকিওরিটি এজেন্সিও চালাতেন রাজু


দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি হোটেল রয়েছে রাজুর। সেখানে বাণিজ্যিক বহুতলের বিভিন্ন ফ্লোরে নামী সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে শোরুম ভাড়া দেওয়া রয়েছে। স্টিল টাউনশিপে একটি গেস্ট হাউস নেওয়া রয়েছে ইজারায়। দুর্গাপুরে বিধাননগরের কাছে একটি রেস্তরাঁও রয়েছে রাজুর। দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে পরিবহণ অফিস, এই মুহূর্তে যা বন্ধ রয়েছে। তাঁর মালিকানাধীন সংস্থা একসময় আসানসোল দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় ভলভো বাস চালাত।  আগে সিকিওরিটি এজেন্সিও চালাতেন রাজু।


পশ্চিম বর্ধমান জেলার অপরাধ-জগতে অত্যন্ত পরিচিত নাম রাজু। কয়লা পাচার, গাঁজা পাচার, বেআইনি অস্ত্র রাখা, তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বেশ কয়কবার জেলও খেটেছেন এই রাজু। ২০০৫ সালে সরযূ উপাধ্যায়ের বেসরকারি পরিবহণ অফিসে কাজ করতেন রাজু। ২০০৬ সালে এরপর কয়লা কারবারে নামেন। পরে আসানসোল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় তাঁর কারবার ছড়িয়ে পড়ে। 


 কয়লা পাচারের অভিযোগ ২০১১ সালের ৩ জুলাই রাজুকে গ্রেফতার করেছিল রানিগঞ্জ থানা। ২০১৪ সালের ২৬ মে ফের কাঁকসা থানার হাতে তিনি ধরা পড়েন। ২০১৫ সালের ৬ মে কাঁকসায় কয়লা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার। ২০১৬ সালের জুন মাসেও কাঁকসা থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তিন মাস পর জামিনে ছাড়া পেয়ে ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছিলেন রাজু।


আরও পড়ুন: Babul Supriyo: দিলীপের উপস্থিতিতে হয় ‘ডিল’, রাজুর হোটেলে যাতায়াত ছিল বিজেপি নেতাদের, নিহত কয়লা মাফিয়াকে নিয়ে বিস্ফোরক বাবুল


এর পর ২০১৬ সালে ৬ ডিসেম্বর বাগুইআটি থেকে টাকা পাচারের অভিযোগে ফের রাজুকে গ্রেফতার করে এসটিএফ ।  ২১ ডিসেম্বর ২০২০ বিজেপি-তে যোগদান করেন এই কয়লা মাফিয়া।  বিজেপি-র প্রচারেও অংশ নেন তিনি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কয়লা পাচারের অভিযোগে বাঁকুড়া থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সেই মামলায় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আর রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় ছিলেন না রাজু।


সূত্রের খবর, ইলামবাজারের গরুর হাটের মালিক এবং গরু পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শেখ আবদুল লতিফ বীরভূমের কয়লা কারবার দেখতেন। সেই সূত্রে লতিফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল রাজুর। তাঁর কাছ থেকে সাহায্য নিত রাজু।   


এই রাজুকে বিজেপি-তে (BJP) নেওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের বিরোধ বাধে বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন বিজেপি এবং অধুনা তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয়র। ট্যুইটারে বাবুল লেখেন,  'রাজু ঝা-কে নিয়েই আজ বিজেপি-র যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে চূড়ান্ত মতবিরোধ হয় আমার। ঘটা করে রাজুকে বিজেপি-তে যোগদান করিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। আজ এঁরা বলবেন, 'চিনি না'!'


বাবুল আরও লেখেন, 'রাজুর হোটেল বিজেপি-র বড় বড় নেতারা ব্যবহার করতেন। আর আমাকে বদনাম করতে দুর্গাপুরের রোড শো-তে সব ব্যানারের নিচে 'সৌজন্যে রাজু ঝা' লেখানো হয়েছিল। প্রশ্ন এটাই যে, বিজেপি নেতাদের উপর কেন CBI-ED তল্লাশি হবে না'! বিজেপি-কে ওয়াশিং মেশিন বলেও উল্লেখ করেন বাবুল।


রাজুর বিজেপি সংযোগ নিয়ে সরব বাবুল


বাবুলের দাবি, লক্ষ্মণ নামের এক 'দুষ্টু' বিধায়ক আসানসোলের সভাপতি হওয়ার জন্য সকাল থেকে তাঁর বাড়িতে বসে থাকতেন। সেই লক্ষ্মণ ছিলেন কৈলাসের আশীর্বাদধন্য। বিজেপি এবং দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রাজুর বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করেন বলে দাবি বাবুলের।