অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2023) সূচনা করেন লক্ষ্মীকান্ত রায়চৌধুরী। ১৬০০ সালে সাবর্ণরা দুর্গাপুজো (Durga Puja) শুরু করেন হালিশহরে। এরপর ১৬১০ সালে ওই পুজো বড়িশায় স্থানান্তরিত হয়। এখনও সাবর্ণদের আটটি বাড়িতে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বড়িশার ছটি বাড়ি ছাড়াও রয়েছে নিমতাবাড়ি ও বিরাটিবাড়ি। বড়িশার যে ছটি বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে, সেগুলি হল বড়োবাড়ি,  মেজোবাড়ি, আটচালা, বেনাকীবাড়ি, মাঝেরবাড়ি এবং কালীকিঙ্করবাড়ি। এই আট বাড়ির পুজোতেই দেবীর একপাশে থাকেন শ্রীরামচন্দ্র এবং অন্যপাশে মহাদেব। (Mahadev) 


শুরুটা হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ায়। বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বড় বাড়ির পুজোর বয়স ৩০৭ বছর। কৃষ্ণদেব রায়চৌধুরীর হাত ধরে ১৭১৭ সালে এই পুজো শুরু হয়। এখানে পুজো হয় বিদ্যাপতি রচিত দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী মতে। এই মতে, অষ্টমী ও নবমীতে দেবীর পাশাপাশি অসুরদের উদ্দেশেও ‘মাসভক্তবলি’ পুজো অর্পণ করা হয়। একশো ষাটটি খুড়িতে সাজিয়ে দেওয়া হয় নৈবেদ্য। নবমীর দিন কুমারী পুজো হয় সার্বণ রায়চৌধুরীদের বড় বাড়িতে। এদিন চালকুমড়ো, আখ বলি দেওয়ারও প্রথা রয়েছে। 


এখানে সুপ্রাচীন কাঠামোতেই নতুন করে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়া হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর কাঠামো তুলে নেওয়া হয় জল থেকে। সন্ধিপুজোর একটি বিশেষত্ব রয়েছে। সদ্যস্নাতা পরিবারের সদস্যা ভিজে গায়ে, ভিজ কাপড়ে ভোগ রান্না করেন। মায়ের ভোগে থাকে ল্যাটা বা শোল মাছ। মাছ পুড়িয়ে মাখন মিশিয়ে নিবেদন করা হয় দেবীমূর্তির সামনে।


আরও পড়ুন, নবমীতে বেলুড় মঠে শুরু পূজার্চনা, দুপুরে বিশেষ হোমযজ্ঞ-বলি


সপ্তমী থেকে দশমী ১৮ টি ভাগে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় মা দুর্গাকে। মুখে কাপড় বেঁধে রান্না করতে হয় ভোগ। এই পুজোর বিসর্জন প্রতিষ্ঠিত পুকুরেই হয়ে থাকে। পুজোর শেষে বাড়িতে তৈরি বোঁদে দিয়েই হয় দশমী পালন। দিন গড়িয়েছে, বছর গড়িয়েছে, সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের ঐতিহ্যময় অতীত এখন লোকের মুখে মুখে ফেরে।


অন্যদিকে, কাশফুলের ঝাঁকে মন খারাপের হাওয়া। আজ মহানবমী। না পোহায় যেন নবমী নিশি। বাংলার ঘরে ঘরে কাতর প্রার্থনা। শেষবেলার আনন্দটুকু চেটেপুটে নিতে ব্যস্ত উৎসবপ্রিয় বাঙালি। পুজোর আনন্দ উসুল করতে সকাল থেকেই পথে নেমেছেন মানুষ। ফাঁকায় ফাঁকায় অনেকেই দেখে নিতে চান সেরা পুজোগুলি। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সমস্ত পুজো মণ্ডপেই মানুষের ঢল।