ব্যারাকপুর: ডাকাতি আটকাতে যাওয়ায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছেলেকে গুলি করে খুন। ভরসন্ধেয় ব্যারাকপুরের আনন্দপুরী এলাকায় হাড়হিম করা ঘটনার পর ২২ ঘণ্টা পার। এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। অন্ধকারে টিটাগড় থানার পুলিশ। এদিন নিহত নীলাদ্রি সিংহর বাড়িতে যান সাংসদ অর্জুন সিং, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার।


পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। শনিবার ব্যারাকপুর ও পলতায় ব্যবসা বন‍্ধের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। ব্যারাকপুরের আনন্দপুরী, অভিজাত এলাকা রীতিমতো জনবহুল। বাজার রয়েছে। সামনেই ব্য়াঙ্ক। রাতদিন হাজারো লোকের আনাগোনা। তার মধ্যেই গতকাল ভরসন্ধেয় ক্রেতা সেজে, হেলমেট, টুপি, মাস্কে মুখ ঢেকে সিংহ জুয়েলারি হাউসে হানা দেয় ডাকাতরা। লুঠপাটে বাধা দেওয়ায় গুলি করে খুন করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছেলেকে। গুলিবিদ্ধ হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তাঁর এক কর্মচারী। এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।


নিচুতলার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ব্যারাকপুরে বোমা-গুলি নতুন ব্যাপার নয়। ভাল অফিসার হলে কোনও ব্যাপার নয়। ব্যারাকপুরে শ্যুটআউট নিয়ে কার্যত পুলিশকেই কাঠগড়ায় তুললেন অর্জুন সিং। 


জামাই ষষ্ঠীর আগের রাতে খুন নীলাদ্রি সিংহ। ব্যারাকপুরের আনন্দপুরী এলাকায় নিজেদের সোনার দোকানে ডাকাতদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বছর সাতাশের ওই যুবকের। গতবছরের ডিসেম্বরে বিয়ে হয়েছিল। এটাই ছিল প্রথম জামাই ষষ্ঠী। তবে সেই আনন্দ উৎসবে আর যোগ দেওয়া হল না নীলাদ্রির। 


গত ৫ মাসে রাজ্য়ে প্রায় ২০ বার! শুধু উত্তর ২৪ পরগনাতেই ৩ বার! একের পর এক শ্য়ুটআউট! গুলি, গতকাল বুক থেকে রক্ত ঝড়ছে আগ্নেয়াস্ত্রের আস্ফালন!
ব্য়ারাকপুরের আনন্দপুরীর মতো জনবহুল এলাকায় সোনার দোকানে ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায়, যেভাবে দোকান মালিকের ছেলেকে খুন হতে হল, তাতে শিউরে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 


এই সিসিটিভি ফুটেজ, শিরদাঁড়া দিয়ে আতঙ্কের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। এটাই প্রথম নয়! গত কয়েক বছরে ব্য়ারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে একাধিক শ্য়ুটআউটের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০-র ৫ই অক্টোবর। টিটাগড় থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, গুলি করে খুন করা হয় ব্য়ারাকপুরের বিজেপির দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লাকে। বিটি রোডের ওপর শ্যুটআউটে ঝাঁঝরা হয়ে যান মণীশ শুক্লা। গত বছর এই মে মাসেই, ব্যারাকপুরে ভিড়ে ঠাসা বিরিয়ানির দোকান লক্ষ্য় করে চলে এলোপাথাড়ি গুলি। গুলিবিদ্ধ হন দোকানের এক কর্মী ও এক ক্রেতা। 


গত মাসেই, ২৪-শে এপ্রিল, টিটাগড়ে দিনেদুপুরে শ্য়ুটআউটের ঘটনা ঘটে। খুন হন এক ডাম্পার ব্য়বসায়ী। নিহত ব্যক্তিকে তাদের দলের কর্মী বলে দাবি করে তৃণমূল। 


গত বছর, ব্য়ারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অদূরে, পানিহাটিতে, ভরসন্ধেয় পাড়ার মধ্যে তৃণমূল কাউন্সিলরকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয়। 


শুধু শ্য়ুটআউটের ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিককালে টিটাগড়-ব্য়ারাকপুরে একাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 


গত বছরের ১৪-ই ফেব্রুয়ারি, টিটাগড়ে, বোমা ফেটে মৃত্য়ু হয় চার বছরের শিশুর। 


ওই বছরই ১৭ই সেপ্টেম্বর, টিটাগড়ে ক্লাস চলাকালীন স্কুলের ছাদে বিস্ফোরণ ঘটে। আতঙ্কে স্কুলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। 


এর ৩ মাস পরই সেই টিটাগড়ে স্কুলেপ পাশে মাঠে বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয় ২ স্কুলছাত্র। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় তাজা বোমা।  


এবার ব্য়ারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ভয়ঙ্কর ডাকাতি ও খুনের ঘটনা। এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মৃতের পরিবার। মৃতের দিদি বলছেন, অ্য়াডমিনিস্ট্রেশন একদম খারাপ। পুলিশ-প্রশাসন সেভাবে নেই। রাস্তাঘাটে ঠিকমতো চলাচল করা যায় না। রাত ১০ টার সময় মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বেরোতে পারি না। মদ খেয়ে পড়ে থাকে। কাদের জানাব? তাহলে তো আমাকে মেরে দেবে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ব্যারাকপুর ও পলতায় ব্যবসা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।