সমীরণ পাল ও আব্দুল ওয়াহাব, স্বরূপনগর : কখনও আইপিএস অফিসার, কখনও গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিক। আবার কখনও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বলে পরিচয় দেওয়া। একাধিক ভুয়ো পরিচয়ে বেকার যুবক, কিশোর-কিশোরীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে তাদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গতকাল রাতে স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।


সূত্রের খবর, ধৃত যুবক বাকিবিল্লা গাজি গত দুবছর ধরে স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিল। নিজেকে কখনও পুলিশকর্তা, কখনও গোয়েন্দা দফতরের অফিসার বলে পরিচয় দিত। তার মূল লক্ষ ছিল বেকার যুবক-যুবতীরা। চাকরির খোঁজে আসা বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিত সে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত বাকিবিল্লা গাজি ইতিমধ্যেই ১২ থেকে ১৫ জন যুবকের কাছ থেকে পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছে। চাকরির আশায় কেউ জমি বিক্রি করেছেন তো কেউ অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করেছেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। 


বছর আঠাশের বাকিবিল্লা গাজির নামে স্বরূপনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রতারিত যুবক সঞ্জীব আমিন। তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছ থেকে ধৃত ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তদন্তে নেমে স্বরূপনগর থানার পুলিশ তেঁতুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি পুলিশের কাছে গোপনসূত্রে খবর আসে যে, কোনও এক ব্যক্তি নিজেকে কখনও আইপিএস অফিসার, কখনও গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে লোক ঠকানো শুরু করেছে। প্রতারণার সুবিধার্থে কখনও গোকুলপুর, কখনও সাহেস্থানগরে থাকত ধৃত ব্যক্তি। স্বরূপনগরের এক বাসিন্দা দেবকুমার সরকার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, পুলিশের চাকরি করে দেওয়ার নাম করে অভিযুক্ত বাকিবিল্লা তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় ৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে। দেবকুমার সরকারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েই বাকিবিল্লার খোঁজ শুরু করে স্বরূপনগর থানার পুলিশ। গ্রেফতারির পুর পুলিশের জেরায় নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে ধৃত যুবক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, গত কয়েকমাসে শুধু দেবকুমার কিংবা সঞ্জীব আমিনই নন, অন্তত ১৫ জন শিকার হয়েছেন বাকিবিল্লার। পুলিশের চাকরি করে দেওয়ার নাম করে তাঁদের থেকে ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে সে। 


প্রতারণার শিকার হওয়া এক চাকরিপ্রার্থীর মা বলছেন, 'জমি বিক্রি করে ছেলের চাকরির জন্য টাকা দিয়েছি। এখন শুনছি বাকিবিল্লা একজন প্রতারক। আমরা টাকা ফেরত চাই। তার সঙ্গে চাই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।' ধৃত বাকিবিল্লার কাছ থেকে নকল আর.বি এবং আইপিএসের পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।