পার্থপ্রতিম ঘোষ, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, প্রকাশ সিনহা:  বেহালায় ছাত্রের মৃত্যুর পর যান নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়েছে পুলিশ (Behala Accident)। প্রশাসনের নির্দেশে বড় রাস্তা থেকে কিছুটা সরেছেন হকাররা। কিন্তু, এখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) অফিস মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার রোডের একাংশ জুড়ে।যদিও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইলেন না বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক।


বেহালায় বড়িশার স্কুলে এখন শুধুই নীরবতা, শূন্য়তা, হাহাকার, আর বুকফাটা দুঃখ। সাত বছরের ছোট্ট সৌরনীলের ফুটফুটে মুখটা আর দেখতে পাবেন না ভেবে, চোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না তার বন্ধুদের মা-বাবারাও। শুক্রবার লরির ধাক্কায় ৭ বছরের পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।


সোমবার খুলল বেহালার বড়িশার সেই স্কুল। কিন্তু, ফাঁকা রয়ে গেল, বেঞ্চে সৌরনীলের জায়গাটা। তার স্মৃতিতে আয়োজন করা হয়েছিল স্মরণসভার। আর স্কুল গেটে পা রাখতেই যেন কাঁটার মতো বুকে বিঁধল সন্তান-সমকে হারানোর যন্ত্রণা। অভিভাবকদের মধ্যে কয়েক জন কেঁদেও ফেললেন। 


আরও পড়ুন: Jyotipriya Mallick: নকল বাক্স তৈরি করে ব্যালট জলে ফেলেন বিরোধীরাই! আজব দাবি মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়র


সোমবার সকাল থেকেই বেহালা চৌরাস্তায় ডায়মন্ড হারবার রোডে মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। পড়ুয়াদের নিয়ে অভিভাবকদের মূল রাস্তায় উঠতে দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পারাপার করানো হয়। ফুটপাত ধরে হাঁটতে বলা হচ্ছে পথচারীদের। 
কিন্তু আগে উদ্যোগী হলে হয়ত এইভাবে চলে যেতে হত না ক্লাস টু-এর পড়ুয়াকে, বলছেন সৌরনীলের বন্ধুদের অভিভাবকরা।

স্কুলের সামনে ছোট্ট পড়ুয়ার এভাবে মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছাত্রের মৃত্যুর পর, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাতারাতি বেহালায় বসেছে ড্রপ গেট। এদিকে পড়ুয়ার মৃত্যুর পর, বেহালা চৌরাস্তা লাগোয়া ১০০টিরও বেশি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গুমটি দোকানগুলিকে বড় রাস্তা থেকে দু'ফুট ছেড়ে বসতে বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। রবিবার রাত থেকেই শুরু হয় সেই কাজ।

এই স্কুলটি পড়ে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্য়ে, যার বিধায়ক পার্থ বর্তমানে জেলবন্দি। সোমবার সৌরনীলের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া জানান পার্থও। বলেন, "বেহালা যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমার ২৫ বছরে এমন ঘটনা দেখিনি।" কিন্তু  চৌরাস্তা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে, বেহালা ম্যান্টনেই রয়েছে পার্থর দফতর। 


বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এখন জেলে রয়েছেন। মন্ত্রী থাকাকালীন ম্যান্টন মোড়ের কাছে একেবারে ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরেই অফিস বানিয়েছিলেন তিনি। পার্থ জেলে থাকলেও তাঁর অফিসে এখনও কেউ হাত দেয়নি। বেআইনি ভাবেই সেটি তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেননি পার্থ।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একবছরের বেশি পার্থ জেলে থাকলেও, রাস্তা দখল করে তৈরি তাঁর এই অফিসে কারও হাত পড়েনি। কিন্তু কেন? এ নিয়ে প্রশাসন ও পূর্ত দফতরের ঘাড়ে দায় ঠেলেছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর এবং মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, "রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পূর্ত দফতর। অফিস সরানোর সিদ্ধান্তও প্রশাসনের।" কিন্তু একদিকে সৌরনীলের মৃত্য়ুর পর থেকে যেভাবে তৎপরতা চোখে পড়ছে, ততটাই নীরবতা চোখে পড়ছে পার্থর ওই দফতর সরানো নিয়ে।