ভাস্কর ঘোষ, হাওড়া: তীব্র দহনে পুড়ছে গোটা রাজ্য। এখনও সাবধানী না হলে, ভয়ঙ্কর বিপদ অপেক্ষা করছে বলে লাগাতার সাবধানবাণী শুনিয়ে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে গালভরা প্রতিশ্রুতিই সার, বাস্তবে তার প্রয়োগের দেখা নেই। এমন পরিস্থিতিতে কার্যতই অসাধ্য সাধন করে দেখালেন একদল গবেষক। পরিবেশ বান্ধব গ্রিন ইউরিয়া তৈরি করে দেখালেন তাঁরা।



বেলুড়মঠের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের শিল্প এবং ফলিত রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উত্তম কুমার ঘড়াই এবং তাঁর সহকারীরা এই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন। সাধারণত বানিজ্যিকভাবেই ইউরিয়া তৈরি করা হয়। মূলত দুই ধাপে, এই ইউরিয়া তৈরি হয়। প্রথম ধাপে শতাব্দী প্রাচীন Haber-Bosch process অনুযায়ী নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেনকে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশয়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলের ২০০-৪০০ চাপে ধাতব অনুঘটকের উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়া তৈরি করা হয়। 



দ্বিতীয় ধাপে সেই অ্যামোনিয়া এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা হয় ইউরিয়া। এই পদ্ধতিতে ইউরিয়া প্রস্তুত করতে প্রচুর পরিমাণ কয়লা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যা পরোক্ষভাবে বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটায়। এই ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইডই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী, যা কিনা অন্যতম প্রধান গ্রিন হাউজ গ্যাস হিসাবে পরিচিত।



কিন্তু বেলুড়মঠের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান উত্তম কুমার ঘড়াই এবং তাঁর সহকারি গবেষক বৃন্দ, ব্রহ্মচারী ঈশাত্মাচৈতন্য, সৌরভ পাল, আশাদুল আদলদার, সৌগত সরকার এবং বিশ্বজিৎ ঘড়াই উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ইউরিয়া উৎপন্ন করতে কোনওরকম তাপ এবং চাপের প্রয়োজন নেই। একটি মাত্র ধাপে নাইট্রোজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মিশ্রণকে তাদেরই তৈরি করা ধাতব ন্যানো অনুঘটকের (ধাতব থ্যালোসায়ানিন) উপস্থিতিতে ইলেক্ট্রো ক্যাটালিসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরিয়া দ্রবণে পরিণত করা হয়, যা সরাসরি চাষের কাজে সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। 



পরিবেশ বান্ধব বলে এই ইউরিয়াকে গ্রিন ইউরিয়া নামে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। গ্রিন ইউরিয়া তৈরিতে কোনও জ্বালানির প্রয়োজন নেই বলে যেমন জ্বালানির সাশ্রয় হয়, তেমনই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনও গ্যাসও নির্গত হয় না বরং বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে পরিবেশে তার মাত্রাও কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।