ভাস্কর ঘোষ, বেলুড়: জোয়ারে প্রবল ঢেউ গঙ্গায়, বেসামাল যাত্রী বোঝাই লঞ্চ। উত্তাল গঙ্গাবক্ষের ছবি ভাইরাল। মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণেশ্বর থেকে বেলুড় যাওয়ার সময় উত্তাল গঙ্গায় বেসামাল হয়ে পড়ে লঞ্চটি। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন যাত্রী। কোনওমতে লঞ্চটি নোঙর করা হয় লালগোলা ঘাটে নিয়ে যাওয়ার পরে। 


গতকাল থেকে সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ছবি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণেশ্বর থেকে বেলুড় মঠের লালগোলা ঘাটে আসার সময় একটি যাত্রিবাহী লঞ্চ গঙ্গার বুকে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মুখে পড়ে। সেই সময় জোয়ার চলছিল। জোয়ারের সময় বিপরীতমুখী স্রোত থাকার জন্য উথাল-পাতাল ঢেউয়ের সামনে মোচার খোলার মতো দুলছিল লঞ্চটি। ডুবে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। লঞ্চ তখন যাত্রীতে ভর্তি। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় লঞ্চে। কয়েকজন যাত্রী বমিও করে ফেলেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন সকলে। এইভাবে প্রায় ১৫-২০ মিনিট চলার পর অবশেষে লঞ্চ এসে থামে বেলুড় মঠের পাশে লালগোলা ঘাটে। কোনওমতে নামার পর যাত্রীরা হাফ ছেড়ে বাঁচেন। কয়েকজন সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়লেও বড় বিপদ কিছু ঘটেনি। 


লঞ্চে প্রতিদিনই গঙ্গা পেরোন সমর ঘোষ। ভিডিওটি দেখেছেন তিনি। সেই বিষয়ে তিনি বলেন, 'অনেক সময় লাইফ জ্য়াকেট পর্যাপ্ত থাকে না। অফিস টাইমে যত লোক ওঠে পর্যাপ্ত নয়। আরও ব্যবস্থা করা দরকার। তবে শুধু সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। অনেক সময় থাকলেও অনেক যাত্রী পরে না। সেক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত।' তিনি জানান, বর্ষার সময় গঙ্গায় বড় ঢেউ ওঠে। আবহাওয়া দফতর থেকে যে গাইডলাইন থাকবে তা শুনে এমন পরিস্থিতি হলে সেই সময় লঞ্চ না চালানোই ভাল, তাঁর মত।


ফেরিঘাট কর্মী বিশ্বজিৎ সরকারের অবশ্য দাবি, 'দুর্ঘটনার ব্যাপার নেই। পূর্ণিমা, অমাবস্যায় বান হয়। এই সময় লঞ্চ নিয়ে মাঝখানে থাকলেই নিরাপদ থাকে। যাত্রীদেরও সুবিধা হয়। যারা মাস্টার, লঞ্চ চালায় তাঁরা নিরাপদ জায়গায় নিয়েই রেখেছিল।' বানের সময় সতর্কতা থাকে না? তিনি জানালেন, ওইরকম সময়ে লঞ্চ তোলা থাকে। কিন্তু টাইম ছিল বলেই ছেড়ে দিয়েছিল লঞ্চ। এতজন যাত্রীর প্রাণের ঝুঁকি জড়িত যেখানে সেখানে আগে থেকে ভাবনা-চিন্তা করা কি উচিত ছিল না? ফেরিঘাট কর্মী বিশ্বজিৎ সরকারের দাবি, 'চিন্তাভাবনা করা দরকার ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বান আসবে তা বুঝতে পারেনি। ২০ মিনিট-আধঘণ্টার রাস্তা। ওই সময়ের মধ্যে এসে ভিড়তে পারেনি বলেই সমস্যা হয়ে গিয়েছে।'



প্রতিদিন জোয়ারের নির্দিষ্ট সময় বন্ধ থাকে লঞ্চ যাতায়াত। তাহলে কেন জোয়ারের সময় ওই লঞ্চ ছাড়া হল? এই প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। সরকারি নির্দেশিকা মেনে লাইভ জ্যাকেট কেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে না সে প্রশ্নও উঠছে। যদিও যাত্রীদেরই একাংশের এই জ্যাকেট পড়ার বিষয়ে অনীহার কথাও উঠে আসছে । সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের ভাইরাল হওয়া এই ছবি জলপথ পরিবহন নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে দিল।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।    


আরও পড়ুন: আজ দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে কী বার্তা ?