আশিস বাগচী ও সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা : দীর্ঘদিন পর শুক্রবার বিধানসভায় মুখোমুখি কথা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)। এরপরই তৃণমূল ও বিজেপির সেটিংয়ের কটাক্ষ করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভায় ফের আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেল শুভেন্দু অধিকারীকে।


নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা। গরু পাচারের অভিযোগে, যখন তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ করছে বিজেপি, তখন গত শুক্রবার বঙ্গ রাজনীতি এমন এক ছবির সাক্ষী থাকে, যা ইদানিং কালে কখনও দেখা যায়নি ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সাক্ষাৎ ! একে অপরকে উঠতে বসতে নাম করে, না করে আক্রমণ ! কখনও কখনও ব্যক্তিগত সীমারেখার মধ্যেও ঢুকে পড়া ! আর সেই আবহেই এই হঠাৎ সাক্ষাতের পরই, তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সেটিংয়ের পুরনো অভিযোগ নতুন করে তুলে ধরে সোচ্চায় হয় সিপিএম-কংগ্রেস।


‘সেটিং’ তরজা-


সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, মোদির কাছে দিদি আত্মসমর্পণ করেছে। আর দিদির কাছে শুভেন্দু। লড়াই লড়াই ভাব দেখাতে হবে, অথচ ভেতরে সমঝোতা।


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, দিদির সঙ্গে মোদির সমঝোতা আজকের নয়, অনেক পুরনো হয়ে গেছে। মোদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় তাঁকে লাল গোলাপ পাঠিয়েছেন। মোদির সঙ্গে দিদির কোনও দিন খারাপ সম্পর্ক নেই। যেটা হয় শুধু নাটক করার জন্য, ভোট করার জন্য হয়। কোনও দিন বিরোধিতা নেই, সমঝোতা বাইরে কিছু ছিলও না।


বিধানসভায় সাক্ষাৎ নিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস যখন ‘সেটিং’ অভিযোগে সরব, তখন ফের আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায় শুভেন্দু অধিকারীকে। ভূপতিনগরের সভামঞ্চ থেকে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, "ডিসেম্বর মাসে একটা বড় ডাকাত, এই রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ডাকাত, ডিসেম্বর মাসে ভেতরে ঢুকলে, সেই দিন রাতের পরে এলাকায় থাকতে পারেব তো।


সিপিএম-কংগ্রেসের তোলা সেটিং তত্ত্বেরও জবাব দিতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, "২০২১ সালে সিপিএম-কংগ্রেস মিলে এই ৭৫-৭৬ই ছিল। তাদের বিরোধী দলনেতা ছিলেন ২০১১-২১। সেটিং দেখেছেন। আর আজকের লড়াইটা দেখতে পারছেন। অতএব, ওদের কাছ থেকে আমার সংশাপত্র নেওয়ার দরকার নেই। সূর্যকান্ত মিশ্ররা সূর্য অট্টের কাছে গোরাহার হন, আর কংগ্রেসের তো অস্তিত্বই নেই।"


অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন ভালবেসে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন, প্রশংসা করেন, তখন সেটা সেটিং হয় না। বিমান বসু যখন নবান্নে যান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফিশ ফ্রাই অফার করেন, তখন তাদের মনে থাকে না। ফলে, মুখ্যমন্ত্রী সৌজন্য দেখিয়েছেন। কিন্তু, কংগ্রেস ও সিপিএম, তাদের নিজেদের নেতাদের ক্ষেত্রে একাধিক নিদর্শন রয়েছে সেগুলোর তারা আজ কী ব্যাখ্যা দেবেন ? 


একসময় নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাম প্রতিনিধি দলের বৈঠক ঘিরে ‘ফিশ ফ্রাই’ রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে সিপিএমের দিকে জোরাল কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছিল বিজেপি। আর এখন মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার সাক্ষাৎকে সামনে রেখে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে, তৃণমূল-বিজেপির ‘দোস্তি’র অভিযোগে সরব সিপিএম।