আবির দত্ত, কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর, কুড়িজন অযোগ্য প্রার্থীর সুপারিশপত্র ফিরিয়ে নিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন ( School Service Comission ) । চাকরি হারানো তেমন কয়েকজনকে খুঁজে বার করেছে এবিপি আনন্দ ( ABP Ananda ) । অন্যদিকে, এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাঁদের প্রশ্ন, এই অযোগ্য প্রার্থীরা, এতদিন ধরে যাদের পড়াল, তাদের ক্ষতির দায় কে নেবে?
'ইংলিশে লেটার লিখতে পারত না'
চাকরি যাওয়ার তালিকায় নাম ছিল মুর্শিদাবাদের লস্করপুর হাইস্কুলের রমজান আলির। লস্করপুর হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন রমজান আলি। কিন্তু, স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের থেকে তাঁর সম্পর্কে জানা গেল বিস্ফোরক তথ্য! প্রধান শিক্ষক জানালেন, 'ইংলিশে লেটার লিখতে পারত না। ঘাম বেরিয়ে যেত।' ছাত্ররাও শিক্ষকের নামে ছি ছি করলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রমজানের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের হেমতাবাদে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির কাছে মাটি কাটছেন রমজান।
স্কুল সার্ভিস কমিশন ( SSC ) সুপারিশ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে, নবম-দশমের যে শিক্ষকদের চাকরি গেছিল, তার মধ্যে ছিলেন নীলমণি বর্মণ। যিনি মুর্শিদাবাদের সাহাপুর সাঁওতাল হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু, নামে অঙ্কের শিক্ষক হলেও, অঙ্ক করাতে বললে, তিনি যা করতেন, তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর খোলসা করলেন স্কুলেরই পড়ুয়ারা। ছাত্রদের অভিযোগ, অঙ্ক বুঝতে চাইলে লাঠি দিয়ে মারধর করতে আসতেন তিনি। এক পড়ুয়া তো বলে ফেলল, দ্বিতীয়বার বুঝতে চাইলে লাঠি দিয়ে মারত !
চাকরি গেছে পঞ্চগ্রাম ISA হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষকের মঞ্জুরুল সরকারেরও, যিনি চাকরি পেয়েছিলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, মঞ্জুরুলের চাকরি নিয়ে প্রথমেই তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বলেন, ' চাপ দিত। সন্দেহ হত। ' মঞ্জুরুলের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়। নিয়োগপত্রে দেওয়া ঠিকানা ধরে গিয়ে, সন্ধান মিলল এই মাটির বাড়ির। চাকরি হারানো মঞ্জুরুলকে না পাওয়া গেলেও, তাঁর মা-কে পাওয়া গেল। তিনিও জানালেন, যবে থেকে চাকরি গিয়েছে, তারপর থেকে আসে না।
আবার মুর্শিদাবাদের সালুয়াডাঙা হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন সিদ্দিক গাজি। তাঁরও চাকরি গেছে। তবে তার আগে এই অঙ্কের শিক্ষক যে অঙ্ক করানোর নামে কী করতেন, তা জানিয়েছে পড়ুয়ারা! তাদের অভিযোগ, ' বোঝাতে পারত না। ভুল করত। বলতাম না, ভয় করত' ।
অযোগ্য ব্যক্তির শিক্ষক হওয়ার খবরে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। সালুয়াডাঙা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি অবশ্য এনিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। অভিভাবকদের এখন উদ্বেগ, এতদিন ধরে ছেলে-মেয়েদের কী পড়ালেন এই অযোগ্যরা? তাতে শিক্ষার ভিতটা নড়বড়ে হয়ে গেল না তো?
আরও পড়ুন :
কতটা গভীর হতে চলেছে সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ? কতটাই বা দুর্যোগ হবে কলকাতায় ?
বৈধভাবে পরীক্ষা দিয়েও, স্কুলের চাকরি না মেলায় মাসের পর মাস রাস্তার ধারে বসে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। খেতে হচ্ছে পুলিশের ঘাড়ধাক্কা! একদিকে যোগ্যদের যখন এই করুণ অবস্থা। তখন অন্যদিকে দিনের পর দিন স্কুলে শিক্ষকতা করে গেছেন, অবৈধভাবে চাকরি পাওয়া অনেকেই তাঁদের অনেকেরই ইতিমধ্যেই চাকরি গেছে।
কিন্তু, চিন্তার বিষয় হল, যে অযোগ্যরা এতদিন পড়িয়েছেন, তাঁরা কী পড়ালেন, আর যে অযোগ্যরা এখনও পড়াচ্ছেন, তাঁরা কী শিক্ষা দিচ্ছেন! ভুয়ো শিক্ষক, একটা সমাজের জন্য কী ভয়ঙ্কর! এত এত পড়ুয়ার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, তাঁর দায় কে নেবে?