কলকাতা: সিপিএম নেতা এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে। প্রাইমারি টেট মামলার শুনানি হওয়ার পর এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ। চাকরি খেয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান মামলাকারীদের একাংশ। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আদালত চত্বর থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। (Bikash Ranjan Bhattacharya)


এর পর এজলাস থেকে বেরোতেই তাঁকে কার্যত ঘিরে ধরেন প্রাথমিক মামলাকারীদের একাংশ। এ নিয়ে এবিপি আনন্দে বিকাশ বলেন, "তরুণ ছেলেমেয়ে যাঁরা চাকরি, চাকরি চলে যাবে বলে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।  এ রাজ্যের পিসি-ভাইপোর কথায় হয়ত অনুপ্রাণিত, তাই বললেন, 'আপনি চাকরি খেয়ে নিয়েছেন'। আমার পেটে অত খিদে নেই যে চাকরি খেতে হবে। মামলা হচ্ছে, যাঁরা মামলা করছেন তাঁরাও যোগ্য প্রার্থী। পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, নইলে তাঁরাও সুযোগ পেতেন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, তা প্রমাণিত। বিতর্কের অবকাশ নেই। কিছু অর্বাচীন রাজনীতিকরা উত্তেজিত করছেন, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমার সঙ্গে কোনও অসদাচারণ করেননি কেউ। দুর্নীতি হয়ে থাকলে চাকরি যাবে, কেউ বাঁচাতে পারবে না।"


এ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরা সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা করছেন। এই যে নিয়োগ নিয়ে কেউ অন্যায় করেছেন, দল বা সরকার তাঁদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন না।তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক, শাস্তি হোক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যোগ্যদের নিয়োগের চেষ্টা চলছে. বিকাশবাবুরা এবং কিছু বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম-এর আইনজীবী মুখে বলছেন যোগ্যদের চাকরি দিতে হবে, আর আদালতে গিয়ে গোটা প্যানেল বাতিল করতে বলছেন। ওঁদের এই কৌশল ধরে ফেলেছেন সকলে। তাই মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে।"


বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "বিকাশ ভট্টাচার্যকে বিক্ষোভ দেখিয়ে কী হবে? মামলা করেছিল কংগ্রেস, উকিল ছিলেন বিকাশ। প্রশ্ন হল, তৃণমূল চাকরি চোরদের বাঁচাতে আজ এত যোগ্য পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ শেষ করে দিল। এটা সর্বভুক সরকার।"


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট একধাক্কায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করেছে। সেই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ যদিও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। পরবর্তী শুনানি এখনও বাকি। (Primary TET Case)


সেই আবহেই প্রাথমিক টেট নিয়েও আশঙ্কা বাড়ছে। ২০১৪ সালে TET-এর ভিত্তিতে যে সমস্ত চাকরি হয়েছিল, তাতে কারচুপির ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI. এই মামলায় প্রায় ৭০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে। মঙ্গলবার সেই মামলায় আদালতে সওয়াল করছিলেন বিকাশরঞ্জন। প্রাথমিকে নিয়োগেও OMR শিটে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 


আরও পড়ুন: Arjun-Partha Assets: প্রায় ১০০ মামলা অর্জুনের বিরুদ্ধে, ঋণ ১ কোটির, সম্পত্তির হিসেব দিলেন পার্থও


কীভাবে প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর (OMR) শিটে কারচুপি হয়েছে, তা নিয়ে সওয়াল করেন তিনি। শুনানি শেষে বিকাশ এজলাস থেকে বেরতেই তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন প্রাথমিকের বিতর্কিত শিক্ষকদের একাংশ। অভিযোগ তোলেন, বিকাশরঞ্জনের ভট্টাচার্যর জন্যই চাকরি হারাতে হচ্ছে। ‘চাকরি খেয়ে নিচ্ছেন’ – এই কথাও শুনতে হয় বর্ষীয়ান আইনজীবীকে। তিনি অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া না দিয়েই আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যান।