কলকাতা: প্রার্থিঘোষণা থেকে নির্বাচনী প্রচার, এ বছর কম টানাপোড়েনের সাক্ষী হয়নি ব্যারাকপুর। তৃণমূল টিকিট না দেওয়ায় বিজেপি-তে ফিরে গিয়েছেন অর্জুন সিংহ, আবারও টিকিট পেয়েছেন ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছে পার্থ ভৌমিককে, যাঁর সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়েছেন অর্জুন। নির্বাচনী প্রচারেও দু’জনের সংঘাত টের পাওয়া যাচ্ছে ভালই। সেই আবহেই আগামী ২০ মে, পঞ্চম দফায় লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ব্যারাকপুরে। সেই উপলক্ষে কমিশনের কাছে নির্বাচনী হলফনামা জমা দিয়েছেন অর্জুন এবং পার্থ, তাতে নিজেদের সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরেছেন তাঁরা।(Arjun-Partha Assets)


ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ অর্জুন, আবারও সেখানে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। কমিশনকে অর্জুন জানিয়েছেন, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ১১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৪৭ টাকা, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ২২ লক্ষ ৯২ হাজার ২২০ টাকা, ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে ১৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৮০ টাকা, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ১২ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৮০ টাকা এবং ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে ১৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯৮০ টাকা। (Lok Sabha Elections 2024)


গত পাঁচ বছরে, পার্থর আয় ছিল যথাক্রমে, ৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩৩০, ৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬২০, ৮ লক্ষ ২ হাজার ৯৭০, ১০ লক্ষ ৬০ হাজার ১০ এবং ১৩ লক্ষ ১৬ হাজার ১০০ টাকা। ওই সময়ে তাঁর স্ত্রী নূতনের আয় যথাক্রমে ৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৭০, ৬ লক্ষ ১২ হাজার ৭৫০, ৫ লক্ষ ২ হাজার ১৫০, ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৯০ এবং ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৬০ টাকা ছিল।


আরও পড়ুন: Loksabha Election 2024: 'বিজেপির সরকার হলে কেউ রেহাই পাবে না' সন্দেশখালি প্রসঙ্গে অমিত শাহ


টিটাগড়, ব্যারাকপুর, ভাটপাড়া, জগদ্দল, চুঁচুড়া, বহরমপুর, আমডাঙা, নৈহাটি-সহ বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের অপরাধ মামলার ফিরিস্তি দিয়েছেন অর্জুন। জানিয়েছেন, বেআইনি অস্ত্র রাখা, প্রতারণা, খুনের চেষ্টা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, বেআইনি জমায়েত, দাঙ্গা, হুমকি, ভয় দেখানো, অস্ত্রহাতে সমাবেশ, সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ ঘটানো, চুরি, বিস্ফোরক মজুত, বিস্ফোরণ ঘটানো, শান্তিভঙ্গ, শ্লীলতাহানি, জালিয়াতি, নথি জাল করা, ধর্ম ও জাত নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো, ট্রেন চলতে বাধা দেওয়া-সহ একাধিক ধারায় ৯৩টি অপরাধমূলক মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পার্থ জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দু'টি মামলা রয়েছে।


অর্জুন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর হাতে নগদ ১০ লক্ষ ৮ হাজার ৩২৫ টাকা রয়েছে। স্ত্রী সরোজ কুমারীপ হাতে রয়েছে নগদ ১০ হাজার টাকা। ভাটপাড়া ইউকো ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট ব্যাঙ্কে ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৬৮ টাকা রয়েছে অর্জুনের, নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কে রয়েছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। দিল্লির পার্লামেন্ট হাউজ SBI অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৭৪৬ টাকা রয়েছে, ভাটপাড়া কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কে ২১ হাজার ৫৯০ টাকা, চন্দননগর ICICI ব্যাঙ্কে ১৫ হাজার ৫৪৯ টাকা, HFDC-তে ৪৪ হাজার ৫১৪ টাকা, পোস্ট অফিসে ১০৯৮ টাকা রয়েছে।


পার্থর হাতে নগদ রয়েছে ২২ হাজার ২৮২ টাকা। স্ত্রীর হাতে নগদ ৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪০১ টাকা রয়েছে।  নৈহাটি PNB-তে ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৪৪.৪৪ টাকা, হাইকোর্টের SBI শাখায় ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৯৫৩.০৪ টাকা, নির্বাচনী খরচা বাবদ নৈহাটির ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কে ৭৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৯৪১ টাকা রয়েছে। ১ লক্ষ ৫ হাজার, ৫ লক্ষ এবং ১ লক্ষ টাকার জীবন বিমা রয়েছে তাঁর।  বারাসাত ব্যাঙ্ক অফ বরোদা শাখায় ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৯২.১১ টাকা, বারাসাত PNB-তে ৯৪ হাজার ৪০০.৯৭ টাকা, নৈহাটি PNB-তে ৪৯ টাকা ৮০ পয়সা রয়েছে স্ত্রীর। বারাসাত ব্যাঙ্ক অফ বরোদাতে অর্জুনের স্ত্রীর ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ২১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৩ টাকার। বিমা রয়েছে ১ লক্ষ টাকার। স্ত্রীকে ৬৭ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা ধার দিয়েছেন পার্থ। তাঁর স্ত্রী নূতন কল্যাণীর হোটেলস অ্যাম্বাসাডরে ৩ লক্ষ ৬ হাজার ৭৪ টাকা, বারাসাত অ্যাম্বাসাডরে ৩৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯০৯ টাকা এবং Futurecare-এ ১ হাজার ৭৮৪ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সবমিলিয়ে পার্থর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৫২.৪৮ টাকার। স্ত্রী নূতনের ৭৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৮১০.৮৮ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।


ব্যাঙ্গালোর ফোর্ট ফার্মস শেয়ারে ২৪ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন অর্জুন। NSS  রয়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার। করুণাসিংহকে ৮ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ঋণ দিয়েছেন, আজানি কুমার সিংহকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার এবং গিরীজা দেবীকে ৩ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ দিয়েছেন। ৪৯ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৩০ টাকা দিয়ে ২০২৩ সালে Fortuner গাড়ি কেনেন অর্জুন।তাঁর কাছে সোনা রয়েছে ৩ সক্ষ ৮৯ হাজার ৬৮২ টাকার। স্ত্রীর সোনা রয়েছে ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ২২১ টাকার প্রায়। একটি জমি কিনতে ৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। সবমিলিয়ে অর্জুনের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ২২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩০৯.৬১ টাকার। ৭ লক্ষ ৩ হাজার ২২১.৬০ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে স্ত্রীর।


জগদ্দল, চন্দননগর, হুগলি, বাগনানে ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে অর্জুনের। জমিতে নির্মাণে খরচ করেছেন ১৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকা। সবমিলিয়ে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৫৬ টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে অর্জুনের।


পার্থর স্ত্রী নূতনের নামে কাঁচরাপাড়ায় একটি জমি রয়েছে। ২০১৭ সালে সেটি ১৫ লক্ষ ১২ হাজার ৭৫৯ টাকায় কেনা হয়েছিল, বর্তমানে বাজারমূল্য ২২ লক্ষ টাকা। বারাসাতে তিতুমির বাসস্ট্যান্ডে একটি দোকান রয়েছে, সোদপুর, যশোর রোড, হৃদয়পুরেও সম্পত্তি রয়েছে নূতনের। পাশাপাশি নৈহাটি, সোদপুরে ফ্ল্যাট রয়েছে পার্থর।  সবমিলিয়ে পার্থর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ২৭ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৭২ টাকার। স্ত্রী নূতনের ৬৯ লক্ষ ৮ হাজার ৪৯৬ টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।


অর্জুন-



  • অস্থাবর সম্পত্তি-১ কোটি ২২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩০৯.৬১ টাকা।

  • স্থাবর সম্পত্তি-১ কোটি ২৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৫৬ টাকা।

  • উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ২১ লক্ষ টাকা।

  • ঋণ-১ কোটি ১৮ লক্ষ ৭ হাজার ৫৩৯ টাকা


পার্থ-



  • অস্থাবর সম্পত্তি-১ কোটি ৬৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৫২ টাকা

  • স্থাবর সম্পত্তি ২৭ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৭২ টাকা

  • স্ত্রী নূতনের অস্থাবর সম্পত্তি-৭৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা

  • স্থাবর সম্পত্তি ৬৯ লক্ষ ৮ হাজার ৪৯৬ টাকা

  • ঋণ ১ কোটি ১০ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৫৭ টাকা


রিতেশ কুমার সিংহের কাছ থেকে ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৬০ টাকা, পরশুরা সিংহের কাছ থেকে ২ লক্ষ, সূর্যবালি সিংহের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ধর্মবীর সিংহের কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা, উমা সিংহের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা, পবন কুমার সিংহের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা, সুধা সিংহের কাছ থেকে ২ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। বাড়িভাড়া বাবদ জমা দিয়েছেন ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৮৫ টাকা।  আরও ৩৯ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ১৮ লক্ষ টাকার ঋণ রয়েছে তাঁর মাথায়। সব মিলিয়ে ১  কোটি ১৮ লক্ষ ৭ হাজার ৫৩৯ টাকার ঋণ রয়েছে অর্জুনের।


ব্যাঙ্ক অফ বরোদা থেকে ১৬ লক্ষ ২ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছেন পার্থর স্ত্রী নূতন। পার্থর থেকে নিয়েছেন ৬৭ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। যূথিকা ভৌমিকের থেকে ৪ লক্ষ ৯৭ লক্ষ ৪১০ টাকা, এবং অন্য আত্মীয়স্বজনদের থেকে ২০ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। বাড়িভাড়া বাবদ অগ্রিম পেয়েছেন ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫ টাকা। সবমিলিয়ে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৫৭ টাকা ঋণ রয়েছে।