বোলপুর: জন্মের পর নামকরণ করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) মতো তাঁর পৈতৃক ভিটে নিয়েও গর্ববোধ করেন অনেকে। কিন্তু সেই 'প্রতীচী' নিয়েই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen)। দিল্লির বিজেপি (BJP) সরকারের প্রতি বৈরিতার কারণেই তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ করেছেন অমর্ত্য। তাঁর জিনিস অন্যায় ভাবে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে ফের জানালেন।
বিশ্বভারতীর সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই শুক্রবার পৈতৃক ভিটের মিউটেশন করতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন অমর্ত্য। বিশ্বভারতীর তরফে জমি জরিপ করতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও, তাতে গুরুত্ব দেননি তিনি। সেই আবহেই শনিবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন। কথা বলতে গিয়ে সেখানেই ছোটবেলায় ফিরে যান অমর্ত্য। বলেন, "বাল্য বয়সে এখানে থাকি আমি। এখানে চিঁড়ে-মুড়ি খেয়ে ক্লাসে গিয়েছি। হঠাৎ আমার না হয়ে সেটা ওদের হল কী করে! ১৯৪৩ সালে এটা আমার বাবা লিজ নিয়েছিলেন। লিজে তা লেখাও রয়েছে।"
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chakraborty) এর আগে অমর্ত্যর নোবেলজয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অর্থনীতিতে অমর্ত্য নোবেল পাননি বলে দাবি করেছিলেন। সেই সময় যার যা ইচ্ছে বলতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিলেন অমর্ত্য। কিন্তু এ দিন সরাসরি বিদ্যুৎকে কটাক্ষ করেন তিনি বলেন, "এ সমস্তর মধ্যে একটা খুব ভাববার বিষয় রয়েছে। দিল্লি সরকারের কাজ নিয়ে কি আমি সন্তুষ্ট! না। উনি সন্তুষ্ট সম্ভবত। তাই এটা অসম্ভব নয় যে, উনি মনে করতে পারেন আমাকে দু'চার ঘা দিলে হয়ত দিল্লির কিছু উপকার হতে পারে। এই উপাচার্য কী করেন, সেটা আন্দাজ করা সম্ভব নয়।"
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chakraborty) দাবি করেন যে, বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন অর্মত্য। এই নিয়ে তিন বার বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে অর্মত্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং যৌথ ভাবে জমি জরিপের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অমর্ত্যকে তীব্র কটাক্ষও করেন তিনি। অমর্ত্যকে নোবেলজয়ী বলা যায় না, কারণ তিনি নোবল পাননি বলে ব্যক্তিগত ভাবেও আক্রমণ করেন বিদ্যুৎ।
অমর্ত্য যদিও তাঁর কটাক্ষে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। বরং তাঁকে যে, যা ইচ্ছা বলতে পারেন বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু জমি বিতর্কে কোনও ভাবেই পিছু হটেননি তিনি। জানিয়ে দেন, এখন উপাচার্য যে ঘরে থাকেন, সেটিতে আগে তাঁর মামা থাকতেন। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার যদিও অমর্ত্যর পাশেই দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি বীরভূম সফরের মাঝে অমর্ত্যর কাছে হাজির হন খোদ মুখ্যমন্ত্র মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সেখানে পৈতৃক বাড়ির নথি এবং কাগজপত্র অমর্ত্যর হাতে তুলে দেন তিনি। মমতা জানিয়েছিলেন, অমর্ত্যর পৈতৃক বাড়ির যাবতীয় কাগজ উদ্ধার করে অর্থনীতিবিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিন আর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না তাঁকে। যদিও রাজ্যের তরফে দেওয়া ওই কাগজের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিশ্বভারতী।