ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: একাদশীর দিন প্রথা মেনে শতাব্দী প্রাচীন শ্মশানকালীর বিসর্জন হল দুবরাজপুরে (Dubrajpur)। দশমী নয়, দুবরাজপুর পৌরসভার ১৬ নং ওয়ার্ডে পাহাড়েশ্বর শ্মশানকালীর বিসর্জন হয় একাদশীর দিন। 


বছরের পর বছর ধরে তন্ত্রমতে আজও শ্মশানকালীর মূর্তির পুজো হয় সেখানে। কথিত আছে, আগে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) পর দেবীমূর্তির পায়ে শিকল ও দড়ি বেঁধে ঝাঁটা দেখিয়ে, গালিগালাজ করে মন্দির থেকে মা-কে বের করা হত। যদিও সময়ের সঙ্গে বদলেছে প্রথা। তবে এখনও রীতি মেনে একাদশীর দিন মূর্তির পায়ে শিকল ও দড়ি বেঁধে বেদি থেকে নামানো হয়। পরম্পরা অনুযায়ী দুবরাজপুর শ্মশান কালীর বিসর্জনের দায়িত্ব থাকে দাসপাড়ার মানুষজনের ওপর।


দুর্গা পুজোর শেষে শ্মশানকালীর বিসর্জনের পর ওই কাঠামোতেই ফের তৈরি হয় মায়ের মূর্তি। শ্মশান কালী মায়ের মূর্তি গড়া এবং পুজোর সব দায়িত্বই পালন করেন স্থানীয় এক বৈষ্ণব পরিবার। এই পরিবারেরই এক সদস্য কামাখ্যা থেকে প্রথম মূর্তিটি নিয়ে আসেন। তার পর থেকে বংশপরম্পরায় তাঁরাই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। শুরুতে মূর্তির আকার ছোট থাকলেও, স্বপ্নাদেশ পেয়ে পরে তা বড় করা হয়।                                 


কালীপুজোর দিন ফের সমারহে পূজিতা হন পাহাড়েশ্বর শ্মশানকালী। পাশাপাশি নিত্য পুজোও হয় এই মন্দিরে। শ্মশান কালীর বিসর্জন দেখতে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। শুধু দুবরাজপুর নয়, আশেপাশে অঞ্চলের মানুষের ঢল নামে বিসর্জন দেখার জন্য।


জানা যায় প্রাচীনকালে এই এলাকায় একটি শ্মশান ছিল। জনবসতি বেড়ে যাওয়াও দূরে সরে গিয়েছে শ্মশান। তবে এই মন্দিরটি রয়ে গিয়েছে সেখানে। স্থানীয়দের বিশ্বাস ভক্তের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ করেন এই শ্মশান কালী । তাই দুর্গাপুজোর আগের অমাবস্যা এবং কালীপুজোয় বছরের পর বছর পূজিতা এই শ্মশানকালী। এই পুজো ঘিরে রয়েছে বহু কাহিনিও। স্থানীয়রা বলছেন, পুজোর রাতে একটি কাঁটার আসনে বসে শ্মশান কালীর পুজো করেন পুরোহিত। তবে এই পুজো দেখতে দেওয়া হয় না কাউকেই। ভক্তদের মন্দিরে বাইরে বের করে তবে পুজোয় বসেন পুরোহিত। সমস্ত আলো নিভিয়ে অন্ধকারে দু’টি প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো হয় শ্মশানকালীর। 


আরও পড়ুন: Durga Puja 2023: কোথাও ভাসান খণ্ডিত প্রতিমা, কোথাও কচুশাকের ভোগ! নানা রাজবাড়ির নানা কথা