কলকাতা: বাংলার দুর্গাপুজোর (Durga Puja) কথা উঠলেই অবধারিত ভাবেই উঠে আসে বাংলার নানা কোণের রাজবাড়ি পুজোর কথা। আর সেই পুজোগুলির সঙ্গে জড়ানো নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য। কোথাও বিশেষ পদ্ধতিতে হয় বিসর্জন। কোথাও পুজোর উপাচারে রয়েছে বিশেষ কোনও জিনিস। 


কোথাও প্রতিমাকে খণ্ডিত করে ভাসানো হল জলে। কোথাও আবার প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে দর্পণে বিসর্জন হল। প্রথা মেনে কোথাও পান্তা ভাত খেয়ে কৈলাস যাত্রা করলেন উমা। আবার কোথাও দশমীর দিন সাধারণ মানুষের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মাতলেন রাজমাতা। বিসর্জন উপলক্ষ্যে জেলায় জেলায় ধরা পড়ল নানা ছবি। রাজত্ব গিয়েছে, জমিদারি গিয়েছে। কিন্তু ঐতিহ্য রয়েছে, পরম্পরা রয়েছে, থেকে গিয়েছে বনেদিয়ানাও। সারাবছর নিঝুম থাকা রাজবাড়িগুলি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে দুর্গাপুজোর এই কটাদিন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রাজবাড়ির সদস্যরা এসে মিলিত হল শিকড়ের ঠিকানায়। 


কোচবিহার বড়দেবী
৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো কোচবিহার (Coochbehar) শহরে দেবীবাড়ির পুজো। মা দুর্গা এখানে বড়দেবী বলে পূজিতা। দশমীর সকালে দেবীবরণের পর শুরু হয় সিঁদুরখেলা। রাজা নরনারায়ণের হাতে শুরু হওয়া এই পুজোর বিসর্জনের রীতি আজও একই রয়েছে। রশিতে টেনে ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা। মূল কাঠামো অক্ষত রেখে দেবীর দুটি হাত, পায়ের পাতা, অসুর, বাঘ, সিংহকে খণ্ডিত করে যমুনা দিঘির জলে বিসর্জন দেওয়া হয়।


কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি
মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছরের বেশি পুরনো। দশমীর সকালে মাকে বরণ করার পর শুরু হয় সিঁদুরখেলা। এরপর দর্পণে বিসর্জন হয়। বিকেলে কাটি গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন। পুজো দেখতে বিদেশ থেকেও এসেছেন পর্যটকরা। 


বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ি
দশমীর দিন জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে মা-কে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, পুঁটি মাছ, কচুর শাক, দই, মিষ্টি। এরপর শুরু হয় সিঁদুরখেলা। ঢাকের তালে নাচে পা মেলান শহরবাসী। এ বছর বন্ধ রাখা হয়েছে দেবীকে গান স্যালুট দেওয়ার প্রথা। প্রতিমাকে চাকা লাগানো পাটাতনে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজবাড়ির পুকুরে। এখানে নিরঞ্জনের সময় রাজ পরিবারের কোনও সদস্য উপস্থিত থাকেন না। শুধুমাত্র রাজ পরিবারের পুরোহিত এবং শহরবাসীরা বিসর্জনে অংশ নেন। 


মহিষাদল রাজবাড়ি
প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur) মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। ১৭৭৬ সালে রানি জানকী দেবীর হাত ধরে পুজো শুরু হয়। একচালার সাবেকি প্রতিমা। এখানে প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো। প্রথা মেনে দশমীর দিন কনকাঞ্জলি দেওয়া হয়। আগে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণে নিয়ে গিয়ে গার্ড অফ অনার দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন হত। এখন রাজবাড়ির দিঘিতেই বিসর্জন হয়।


কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি
পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দশমীতে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে প্রতিমা বিসর্জন হয়। দেবী এখানে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন। এ দিন রাজবাড়িতে ভিড় উপচে পড়ে।


আরও পড়ুন: লণ্ঠনের আলোয় বিসর্জন উমার! চাঁচল রাজবাড়িতে শতাব্দীপ্রাচীন সম্প্রীতির বাঁধন