ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, সিউড়ি: ঘরে বাইরে সমানভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে চলেছে মেয়েরা। নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে সভা-আলোচনাও নেহাত কম হয় না। কিন্তু সবক্ষেত্রেই কি সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে? তা নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। এমনই এক সময় সাম্যবাদের বার্তা দিল সিউড়ির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। পুত্র সন্তানের পৈতে হলে কন্যা সন্তানের কেন হবে না? সেই প্রশ্ন তুলে বৈদিক যুগের রীতি মেনে পৈতে দেওয়া হল কন্যা সন্তানকে।


কন্যা সন্তানের পৈতের আয়োজন: পৈতে হয় সাধারণত ছেলেদের। কিন্তু মেয়েদের পৈতে? তাও কি সম্ভব? বৈদিক যুগেও এই রকম রীতির প্রচলন ছিল। সেই রীতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছে বীরভূমের পরিবার। ২০২৪ সালে সেই পুরনো রেওয়াজকে ফিরে দেখার সুযোগ হল। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কৈরভীর উপনয়ন আয়োজন করল তাঁর পরিবার। বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা কৈরভী বন্দোপাধ্যায়। কৈরভীর চিকিৎসক বাবা, মা প্রচলিত রীতির পরিপন্থী হয়ে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।


বুধবারের দুপুর ছিল একেবারে অন্যরকম। চারদিকে সাজসাজ রব। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন। হলুদ শাড়ি, ফুলের মালায় সেজেছিল কৈরভী। তাঁকে ঘিরেই এদিন সব আয়োজন করা হয়। তাই উত্তেজনাও ছিল প্রবল। প্রত্যেকটি নিয়মও পালন করে সে। কৈরভীর কথায়, ‘‘মা বলেছে, আজ আমার দ্বিতীয় জন্ম হবে। পৈতে নিতে খুবই ভাল লাগছে। অন্নপ্রাশনের সময় পুরোহিত বলেছিলেন, যজ্ঞ হবে না। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৈতে নিয়ে কার্যত গবেষণা করেন বাবা। দেখা যায় মেয়েদেরও পৈতে হতে পারে। পরিবারের সবাই খুব সাপোর্ট করেছে। বন্ধুরা প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিল। আমি চাই এইভাবে মেয়েদেরও পৈতে হোক।’’


অবশ্য মেয়ের পৈতে দিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি কৈরভীর বাবা, মাকে। তবে সেই সব বাধা পেরিয়ে শেষমেশ তা পারলেনও। সাম্যবাদের বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ বলে জানাচ্ছে সিউড়ির এই পরিবার। কৈরভীর মা ডা. কৌশানী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খুব খুশি, খুব আনন্দিত। অনেক রিসার্চ অনেক বই পড়া হয়েছে যে করা যাবে কিনা। বাধা কিছু ছিল। সাম্যবাদের যুগ মেয়েদের সবাই সমান মনে করে। কিন্তু সত্যি সব জায়গায় মনে করে কি? করাটা উচিত শুধু এটাই বলব। সবাইকে বোঝানো এবং বার্তাটা দেওয়াটা জরুরি ছিল।’’


বৈদিক যুগের রীতি মেনে এর আগেও বাংলায় পৈতে হয়েছে মেয়েদের। এবার এই ছবি রাজ্যের আরেক প্রান্তে দেখা গেল। কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন ওই দম্পতি। সিউড়ির রামকৃষ্ণপল্লীর বাস ভবনে মেয়ের উপনয়নের আয়োজন করেছেন তাঁরা। কার্ড ছাপিয়ে সবাইকে নেমন্তন্ন করা হয়। দম্পতি অবশ্য জানিয়েছেন হঠাৎ ইচ্ছে থেকে নয়, গবেষণা করতে হয়েছে পুরোটা। তার উপর ভিত্তি করেই তাঁদের কন্যার 'প্রাপ্তির’ অনুষ্ঠান করেন। মেয়ের হৃত অধিকার ফিরে পাওয়া উচিত এই ধারণাকে সামনে রেখেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। দম্পতির কথায়, সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা তাদের সমান অধিকার পাওয়া উচিত তাই মেয়ের পৈতে দিচ্ছি ।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।   


আরও পড়ুন: Garden Reach Building Collapse: 'আপনার ভুলের জন্যেই এতগুলো প্রাণ গেল' পুর-আধিকারিকদেরই ধমক মেয়রের