রামপুরহাট: ইট-কাঠ-পাথর পুড়েইছে। তার সঙ্গে পুড়েছে রক্ত-মাংসও। তার পর তিন দিন কাটতে চললেও, বগটুইয়ের বাতাসে এখনও পোড়া গন্ধ টের পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনে কোথাও যেন চাপা পড়ে যাচ্ছিল ব্যক্তিগত শোক-দুঃখ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) দেখে তাই আবেগ বাঁধ ভাঙল শোকস্তব্ধ পরিবারগুলির (Rampurhat Fire)। গোটা রাস্তা মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের পাশাপাশি ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে মানুষের ঢল চোখে পড়লেও, গাড়ি থেকে নেমে সাধারণের মধ্যে মমতা পৌছতেই তাঁর সামনে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না শোকস্তব্ধ মানুষ জন।


গত সোমবার রাতে বীরভূমের (Birbhum Violence) রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে প্রথমে তৃণমূল (TMC) পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হন। তার পর ওই রাতেই পর পর প্রায় ১০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে আসে। তাতে মহিলা, শিশু-সহ আট জন আগুনে ঝলসে মারা যান। তার পর থেকে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে রাজ্যে। এই ঘটনায় বহিরাগত ইন্ধন রয়েছে বলে তৃণমূল দাবি করলেও, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, বালি-পাথর খাদান থেকে বখরা নিয়ে বিবাদকে দায়ী করছে বিরোধী শিবির।


রামপুরহাটে মমতা, তাঁকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শোকার্তরা


সেই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপুরহাট পৌঁছন মমতা। পূর্ব পরিকল্পনা মতো সার্কিট হাউসে না গিয়ে, সরাসরি বগটুই গ্রামে, শোকগ্রহস্ত পরিবারগুলির মাঝে হাজির হন। আর সেখানে তাঁকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পীড়িতরা। জীবন্ত মানুষগুলিকে পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে আওয়াজ দলা পাকানো কান্না চেপে রাখতে ব্যর্থ হন তাঁরা। প্রিয়জনকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে অসুস্থও হয়ে পড়েন এক প্রৌঢ়। তাঁর শুশ্রূষায় এগিয়ে যআন মমতা নিজে। ওই প্রৌঢ়ের মুখে জলের ছিটে দেন তিনি। মাথায় রেখে জলপট্টি দিতেও দেখা যায় তাঁকে।


মমতা জানান, দুষ্কৃতীদের হামলায় ঘরবাড়ি, জলজ্যান্ত মানুষ পুড়ে গিয়েছে। আর এই ঘটনায় তাঁর মন পুড়ে গিয়েছে। মমতা বলেন, “পরশু সকালে ঘটনাটি জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে ববিকে বলি, ‘তুই ইমিডিয়েট যা’। কেষ্টকেও পাঠাই। আমি ভাবতে পারিনি এরকম নৃশঃস ঘটনা ঘটতে পারে কখনও। শুধু কয়েকটা লোকের জন্য। ভীষণ ভয়ঙ্কর ঘটনা, অত্যন্ত দুঃখ-ব্যথা এবং মর্মস্পর্শী ঘটনা।”


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee on Rampurhat Violence: "কাজ না করে এনজয় করলে চাকরির দরকার নেই", পুলিশকে কড়া বার্তা মমতার


মমতা জানান, তাঁর দলের উপ প্রধান ভাদু শেখ খুন হয়েছেন। তার পরেই ১০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। সঠিক সময়ে পুলিশকে ব্যবহার করা গেলে এই ঘটনা হয়ত আটকানো যেত। কিন্তু তাতে গাফিলতি থেকে গিয়েছে। এর জন্য বিজেপি-র ব্লক সভাপতি আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন মমতা। একই সঙ্গে এসডিপিও, আইসি-রও সমালোচনা করেন তিনি। মমতা বলেন, “চেয়ারে থেকে নয়, মানুষ হিসেবে বলছি, এটা আমার মানবিকতা। অবহেলা না করলে এই ঘটনা ঘটত না। সঙ্গে সঙ্গে যদি পুলিশ পিকেটিং দিত, কিন্তু দেয়নি।” ভাদু শেখের হত্যা এবং অগ্নিসংযোগ, এই দুই ঘটনা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও দাবি করেন মমতা।