নান্টু পাল, বীরভূম: পান থেকে চুন খসলেই রে রে করে তেড়ে আসার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই সামাজিক সম্প্রীতির নজির  বীরভূমে (Birbhum News)। সেখানে হিন্দু ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তানের ভিক্ষে মা-বাবা হলেন এক মুসলিম দম্পতি। ছোট থেকে ছেলেটির বাবার সঙ্গে সখ্য ওই দম্পতির। দুঃসময়ে নিজের লোকজন যখন দূরে সরে গিয়েছিলেন, সেই সময় কোনও কিছুর পরোয়া না করে  ছেলেটির বাবা-ছেলের পাশে ছিলেন ওই দম্পতি। সেই আত্মিক যোগসূত্রই এ বার আরও মজবুত হল(Communal Harmony)। 


ব্রাহ্মণ ছেলের ভিক্ষে মা-বাবা হলেন মুসলিম দম্পতি


বীরভূমের রামপুরহাট (Rampurhat News) পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। সেখানকার সারদাপল্লির বাসিন্দা অভিজিৎ মজুমদার। এক সময় একটি বিমা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সবমিলিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল জীবন। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া, অশান্তি লেগেই ছিল। একমাত্র ছেলে অর্ণবের জন্মের পরও দাম্পত্যে মধুরতা ফেরেনি। বরং ছেলের যখন পাঁচ বছর বয়স, তাকে নিয়েই বাড়ি ছাড়েন স্ত্রী। অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘর বাঁধেন। 


সেই পরিস্থিতিতে কার্যত দিশাহীন হয়ে পড়েন অভিজিৎ। মানসিক অবসাদ গ্রাস করে তাঁকে। ছেলেকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট তাড়িয়ে বেড়াতে শুরু করে। কিন্তু এমন সঙ্কটের সময় আত্মীয়-স্বজন কাউকেই পাশে পাননি অভিজিৎ। বরং ওই বিপদের সময় তাঁর আশ্রয় হয়ে ওঠেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রেকিব এবং তাঁর স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান। তাঁরাই অভিজিৎকে অবসাদমুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন। 


আরও পড়ুন: Anima Talukdar: বয়সকে বুড়ো আঙুল! আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় হেঁটে সোনা জিতলেন ৭৯ বছরের অণিমা


শুধু তাই নয়, ঘরছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে আইনি বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে ছেলে অর্ণবকে ফিরে পাওয়া, প্রতি পদে অভিজিতের পাশে ছিলেন ওই দম্পতি। তাই দুঃসময়ের ওই বন্ধু দম্পতিকেই ছেলের জীবনে একরকম স্থায়ী জায়গা করে দিলেন অভিজিৎ। রবিবার অর্ণবের উপনয়ন ছিল। তাতেই জাতপাত, ধর্মের বিভাজনকে তুড়ি মেরে উডিয়ে অর্ণবের ভিক্ষা মা এবং বাবার হিসেবে আব্দুর এবং ওয়াহিদাকেই ছেলের জীবনে প্রতিষ্ঠা দিলেন অভিজিৎ।


হিন্দু শাস্ত্রের বিধিনিয়ম মেনেই রবিবার উপনয়ন হয় অর্ণবের। তারাপীঠ মন্দিরে আয়োজন হয়েছিল পুজো-আচ্চার। সেখানেই অর্ণবের ভিক্ষা মা-বাবা হলেন আবদুর এবং ওয়াহিদা। অভিজিতের কথায়, "বিপদের সময় নিজের আত্মীয়দের পাশে পাইনি। আবদুর এবং তাঁর পরিবারই পাশে দাঁড়িয়েছিল আমার। তাই আমার মাতৃহীন সন্তানের জন্য ওই দম্পতিকেই ভিক্ষা মা-বাবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"


জাতপাতের বিভাজন মানে না দুই পরিবারই


জাতপাত, ধর্মের বিভাজন নিয়েও সাফ বক্তব্য অভিজিতের, "আমি মনে করি, মানুষের কোনও জাত হয় না। আমি ধর্ম দেখি না।" আবদুরের কথায়, "আমরা দুই পরিবারই সাহস করে এগিয়েছি। দৃষ্টান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের বার্তা একটিই, এরকম আরও ঘটুক। সম্প্রীতি বজায় রেখে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরব আমরা। এ ভাবেই বেঁচে থাকব বলে আশা রাখি।"